গুগল থেকে আয় করার সহজ উপায় সমূহ

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত সার্চ ইঞ্জিন হল Google। গুগলে প্রতিদিন প্রায় 5.6 বিলিয়ন সার্চ করা হয়। আর এই সার্চ থেকে গুগল প্রতি মাসে 500 মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হল কিভাবে গুগল থেকে আয় করা যায়।

আজকের পোস্টে, গুগল থেকে আয় সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় আপনার সাথে শেয়ার করা হবে।

গুগল থেকে আয়

আমরা মূলত গুগল থেকে আয়কে 2 ভাগে ভাগ করতে পারি। যেমনঃ-

  1. গুগল থেকে সরাসরি আয় করুন।
  2. গুগল ব্যবহার করে আয় করুন।

এবার চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

গুগল থেকে সরাসরি আয়

গুগল থেকে সরাসরি আয় বলতে আমি বুঝি আয়ের একটি মাধ্যম যেখানে গুগল সরাসরি আমাদের টাকা দেবে। গুগল থেকে সরাসরি আয় করার একমাত্র উপায় হল Google Ads

Google তাদের বিজ্ঞাপনগুলি আমাদের ওয়েবসাইট, YouTube চ্যানেল, অ্যাপে রাখে এবং প্রতিটি ইম্প্রেশন বা দর্শকের জন্য আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে। এটি মূলত গুগল থেকে সরাসরি টাকা আয় করার একমাত্র উপায়।

অ্যাডসেন্সের মাধ্যমে আয় করুন

AdSense হল Google এর একটি অংশ যা ওয়েবসাইট এবং YouTube-এ বিজ্ঞাপন প্রদান করে। এই অ্যাডসেন্স ব্যবহার করে মিলিয়ন ডলার আয় করার উদাহরণও রয়েছে।

আপনি গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে আপনার ইউটিউব বা ওয়েবসাইট থেকে google এডসেন্স যোগ করে অনলাইন থেকে ইনকাম করতে পারেন।

ইউটিউব চ্যানেল ব্যবহার করে অ্যাডসেন্স থেকে আয় করুন

ইউটিউবও গুগলের একটি অঙ্গ। আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে এবং এতে অ্যাডসেন্স বিজ্ঞাপন স্থাপন করে ভাল টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে এর জন্য আপনাকে কিছু শর্ত মানতে হবে। শর্তগুলো নিম্নরূপঃ-

  • ১০০০ সাবসক্রাইবার থাকতে হবে।
  • ৪০০০ ঘন্টা ওয়াচ টাইম থাকতে হবে।
  • ইউটিউব পার্টনার প্রোগ্রামে যুক্ত থাকতে হবে।

আপনি যদি উপরের শর্তগুলি সঠিকভাবে অনুসরণ করেন, তাহলে আপনি সহজেই AdSense এর মাধ্যমে আপনার YouTube চ্যানেল মনিটাইজ করতে পারেন।

এছাড়াও, আপনি একটি YouTube চ্যানেল থেকে বিভিন্ন উপায়ে আয় করতে পারেন। এটি সম্পর্কে আরও জানতে এই পোস্ট পড়ুন.

ওয়েবসাইট ব্যবহার করে অ্যাডসেন্স থেকে আয় করুন

আমরা সবাই ওয়েবসাইট বিষয়ের সাথে প্রায় পরিচিত। আমরা যখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সমস্যার জন্য গুগল বা অন্য কোনো সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করি, তখন কিছু ওয়েবসাইট আমাদের সমস্যার সমাধান দেয় এবং আমরা সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করি এবং ওয়েবসাইট অ্যাডমিন আমাদের বিজ্ঞাপন দেখার জন্য বা বিজ্ঞাপনটিতে ক্লিক করার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করে, যদি এর ওয়েবসাইটটি অ্যাডসেন্স দ্বারা মনিটাইজ করা হয়।

AdSense অনুমোদন পেতে একটি ওয়েবসাইটকে অবশ্যই নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে।

  • Privacy policy, contact with us, about us এই তিনটি পেইজ ক্রিয়েট করতে হবে।
  • আর্টিকেল ইউনিক হতে হবে।
  • গুগল সার্চ কনসোলে ইনডেক্স থাকতে হবে।

উপরের সমস্ত শর্ত পূরণ হলে, আপনার ওয়েবসাইট অ্যাডসেন্স অনুমোদন পাবে এবং আপনি যদি চান, আপনি বিভিন্ন উপায়ে আপনার ওয়েবসাইট মনিটাইজ করতে পারেন।

এডমুভ দিয়ে আয় করুন

মোবাইল অ্যাপ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের মোবাইলে কমবেশি অ্যাপ/গেম আছে। আমরা যখন এই অ্যাপস/গেমগুলি ব্যবহার করছি, তখন আমাদের মধ্যে অনেকেই হঠাৎ করে আমাদের সামনে একটি বিজ্ঞাপন আসতে পারে, এটি হল বিজ্ঞাপন।

(গুগল ছাড়াও অনেক কোম্পানি বিজ্ঞাপন দেয়)। গুগলের যে সংস্থাটি অ্যাপ বা গেমের বিজ্ঞাপন সরবরাহ করে তা হল এডমোভ যদি আমাদের অ্যাপে ভাল সামগ্রী থাকে এবং অ্যাপটি যদি Google Play Store-এ আপলোড করা হয় তবে আপনি আপনার অ্যাপে এডমোভ-এর বিজ্ঞাপন ইনস্টল করতে পারেন।

এডমোভ সাধারণভাবে AdSense এর মতো কোনো শর্ত নেই। যে কেউ সহজেই এডমোভ এর বিজ্ঞাপন অ্যাপ ইনস্টল করতে পারেন। তবে অ্যাপটি অবশ্যই প্লে স্টোরে আপলোড করতে হবে।

Google এডমোভ বা AdSense অবৈধ ক্লিক সম্পর্কে খুব সতর্ক তাই কখনই অবৈধ ক্লিক করার চেষ্টা করবেন না।

উপরের দুটি প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে আপনি সরাসরি Google থেকে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এবং এই প্ল্যাটফর্মগুলি আপনাকে সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাবে।

গুগল কেন এই বিজ্ঞাপনগুলির জন্য আপনাকে টাকা প্রদান করবে?

অনেক দিন আগে, আপনি বুঝতেন বিজ্ঞাপন মানে টিভিতে বিজ্ঞাপন না দেওয়া, ব্যানার, বিলবোর্ড ছাপানো নয়, বড় বড় বগ লাগানো, কিন্তু এখন প্রযুক্তির সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এসেছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর মূল ধারণা হল যে সমস্ত বিজ্ঞাপন অনলাইনে প্রচার করা হবে যেমন ইউটিউব, ফেসবুক ইত্যাদির মত প্ল্যাটফর্মে।

তাই বিভিন্ন বড় কোম্পানী ইউটিউব/ওয়েবসাইটে তাদের ব্যানার বিজ্ঞাপন বা ভিডিও বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের জন্য গুগলকে টাকা প্রদান করে। Google আমাদের YouTube ভিডিও এবং ওয়েবসাইটে সেই বিজ্ঞাপনগুলি প্রদর্শন করে অর্জিত অর্থের 50% দেয়৷ Google এর 50% নেই।

এইভাবে Google নিজে ইনকাম করে এবং আমাদের টাকা প্রদান করে। আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন। না বুঝলে কমেন্টে করে জানাবেন।

গুগলকে ব্যবহার করে আয়

আমি এতক্ষণ যে প্রক্রিয়ার কথা বলেছি, গুগল নিজেই আমাদের টাকা প্রদান করবে বা গুগল আমাদের টাকা প্রদানের দায়িত্ব নেবে।

কিন্তু আমি এখন যে প্রক্রিয়াটি দেখাব তাতে আমরা অন্য কোন কোম্পানি বা প্লাটফর্ম থেকে আয় করব কিন্তু গুগল ব্যবহার করেই ইনকাম করব। উদাহরণ স্বরূপ:-

ই- কর্মাস ওয়েবসাইট দ্বারা গুগল থেকে আয়

এই একবিংশ শতাব্দীতে বাজারে গিয়ে যেকোনো পণ্য কেনার ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে, মানুষ এখন অনলাইনে যেকোনো বাজার করতে পারে এবং বিক্রেতারা অনলাইনে একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজেই তাদের বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করতে পারে।

আর যে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে অনলাইন ক্রেতা ও বিক্রেতারা যুক্ত থাকে সেটি হল -কমার্স ওয়েবসাইট। যদিও 2021 সালে সমস্ত পণ্য অনলাইনে কেনা-বেচা হয় না, তবে এটি শীঘ্রই হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আপনি যদি অনলাইনে একটি ব্যবসা শুরু করতে চান তবে আপনি সহজেই একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুলতে পারেন এবং এতে আপনার পণ্যের বিবরণ বিক্রি করতে পারেন।

একটি উদাহরণ দেওয়া যাক:- একজন ক্রেতার একটি ভালো মানের টি-শার্ট প্রয়োজন। তিনি গুগলে গিয়ে "বাংলাদেশের সেরা টি-শার্ট" লিখে সার্চ করবেন।

একজন ক্রেতা তারপর একজন টি-শার্ট বিক্রেতার ই-কমার্স সাইটে যেতে পারেন এবং সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে টি-শার্টটি কিনতে পারেন।

এটাই ই-কমার্সের নিয়ম। এখানে আমরা গুগল ব্যবহার করেছি কিন্তু আয় নিজেরাই তৈরি করেছি

এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে গুগল থেকে ইনকাম

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হল আজকাল টাকা ইনকামের সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়। ই-কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে, আপনি যে পণ্যটি বিক্রি করেন তার স্টক থাকতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি একটি টি-শার্ট ব্যবসা করেন, তাহলে আপনার কাছে অবশ্যই টি-শার্ট বিক্রি করার মত প্রচুর শার্ট থাকতে হবে।

কিন্তু অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এমন একটা জিনিস যেখানে আপনার নিজের কোনো নির্দিষ্ট পণ্য থাকতে হবে না, আপনি শুধু অন্যের পণ্য বিক্রি করেন এবং তাদের কাছ থেকে কিছু কমিশন পান।

উদাহরণস্বরূপ, একজন টি-শার্ট ই-কমার্স ব্যবসায়ীর সাথে আপনার একটি চুক্তি আছে, আপনি যদি তার একটি টি-শার্ট বিক্রি করতে পারেন তবে তিনি আপনাকে 100 টাকা কমিশন দেবেন।

তারপর আপনি একটি ওয়েবসাইট খুলে ই-কমার্স ওয়েবসাইটের টি-শার্টের ভালো-মন্দ দিক উল্লেখ করেন এবং ক্রেতাকে সেই ই-কমার্স থেকে পণ্য কিনতে আগ্রহী করে তোলেন। এটি হল অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।

সবচেয়ে জনপ্রিয় ই-কমার্স এফিলিয়েট ওয়েবসাইট হল Amazon.com। আপনি চাইলে কোনো পণ্যের রিভিউ ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবে আপলোড করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।

Sponsor এড থেকে ইনকামঃ

আপনার যদি এমন একটি ওয়েবসাইট বা ইউটিউব চ্যানেল থাকে যেখানে প্রতিদিন প্রচুর ভিজিটর বা ভিউয়ার থাকে তাহলে আপনার চ্যানেল বা ওয়েবসাইট বিভিন্ন জায়গা থেকে স্পন্সর পাবে।

অর্থাৎ, আপনি যাদের কাছ থেকে স্পন্সর পাবেন তাদের সম্পর্কে একটি পোস্ট বা ভিডিও করলে তারা আপনাকে টাকা দেবে। এই ক্ষেত্রে, আপনাকে আর Google বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভর করতে হবে না কারণ আপনি স্পনসরদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিতে পারবেন?

এগুলো হল গুগল ব্যবহার করে আয় করার প্রধান এবং জনপ্রিয় উপায়।

বন্ধুরা, এবার চলুন জেনে আসি গুগল থেকে আয় সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর

গুগল এডসেন্স থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায়?

উত্তরঃ- গুগল এডসেন্সের এর থেকে মাসে কত টাকা আয় করা যায় তা নির্ভর করবে আপনার youtube বা ওয়েবসাইট এর ভিজিটরের ওপর অর্থাৎ ভিসিটরস বা ভিউয়ারস এর লোকেশন এবং সংখ্যার উপর আবার আপনার কন্টেন্টের উপরও নির্ভর করে।

ওয়েবসাইটের জন্য বেস্ট এডসেন্স অলটারনেটিভ কি?

উত্তরঃ- এডসেন্সের বেস্ট অলটারনেটিভ বলা যায় media.net কে। যদিও এই প্ল্যালফর্মে এপ্রুভাল নেওয়া আরো বেশি কষ্টকর কারণ এটি USA ভিত্তিক এড নেটওয়ার্ক।

এপ এর জন্য বেস্ট এডমোব অলটারনেটিভ কি?

উত্তরঃ- এপ এর জন্য এডমোব ই বেস্ট তার অলটারনেটিভ প্রয়োজন হয় না।এডমোব এর সবচেয়ে জনপ্রিয় অলটারনেটিভ গুলো হলো Facebook ads, Unity ads।

কোন টপিক নিয়ে কন্টেন্ট বানালে বেশি ইনকাম করা যায়?

উত্তরঃ- হেল্থ, টেকনোলজি, কৃষি, ইত্যাদি বিষয় গুলো নিয়ে কন্টেন্ট বানালে ভালো ইনকাম করা যায় তবে যেই টপিক নিয়েই বানান ইংরেজি টপিকেই ভালো আয় হয়।

ইউটিউব/ওয়েবসাইটে ভিজিটর/ভিউয়ারস বাড়ানোর জন্য কি করতে হবে?

উত্তরঃ-ইউটিউব ভিডিওতে ভিউস বাড়াতে হলে আপনার ভিডিওকে অপটিমাইজড করতে হবে এসইও করতে হবে। ওয়েবসাইটের জন্য আর্টিকেলকে ভালো ভাবে অপটিমাইজ করে এসইও করতে হবে।

এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি শুধু ই-কমার্স ওয়েবসাইট এর সাথে করা যায়?

উত্তরঃ- না। কিছু কিছু ওয়েবসাইট আপনাকে আপনার নিশ বেসড প্রোডাক্ট দিবেন।যেমনঃ- clickbank.com, warriorplus.com।

ওয়েবসাইট তৈরি করতে কত টাকা খরচ হয়?

উত্তরঃ- ওয়েবসাইট ফ্রীতেও তৈরি করা যায় আবার টাকা দিয়েও তৈরি করা যায়।

কিছু কথা যা আপনার এই সামনের দিকে চলা সহজ করবে

  • ধৈর্য রাখবেন সবসময়। চেষ্টা করবেন আপনার অডিয়েন্সকে সন্তুষ্ট করতে তাদের উপকার করতে তবেই আপনার আয় হবে।
  • কখনো শর্ট কাট খুজবেন না। গুগল এডসেন্সের অলটারনেটিভ অনেক নেটওয়ার্ক ও আছে কিন্তু সেগুলো থেকে আমনি ভালো কিছু করতে পারবেনা না।
  • এমন কিছু করবেন না যা গুগলের পলিসির বাইরে।
  • নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবেন কন্টেন্ট ভালো করার।
  • ইনভেলিড ক্লিক করবেন না। নতুনরা নিজে নিজে ক্লিক করে আয় করতে চায়। মনে রাখবেন গুগল আপনার আমার চেয়েও অনেক চালাক।

সবকিছু শিখে, জেনেশুনে তারপরেই প্ল্যাটফর্মে আসবেন না হয় ব্যর্থ হয়ে হতাশায় পড়তে হবে।

আমাদের কথা,

গুগল থেকে আয়ের সমস্ত বিষয় এই পোস্টে আপনার সাথে শেয়ার করা হয়েছে। Google থেকে আয় সম্পর্কে আপনি কী পছন্দ করেন এবং ভবিষ্যতে আপনি কী করতে চান তা মন্তব্যে আমাদের বলুন।

যদি আপনার কাছে আমাদের এই পোস্ট ভাল লেগে থাকে, তাহলে অবশ্যই আপনাদের বন্ধু-বান্ধবদের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ?

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles