কম্পিউটার ও মানবজাতি

আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার গুলির মধ্যে এক অন্যতম আবিষ্কার কম্পিউটার। কম্পিউটারের আবিষ্কার মানব সভ্যতায় এক আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এ যেন এক যন্ত্র মস্তিষ্ক; মানুষের জটিল জটিল সমস্যা গুলি নিমিষে সমাধান করে দিতে পারে। এতে মানুষের মানসিক চাপ ধীরে ধীরে লুপ পাচ্ছে ?

কম্পিউটারের ব্যাবহার আমাদের দেশে সমস্ত ক্ষেত্রে, ব্যাক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিয়ে এসেছে এক বিরাট পরিবর্তন। কম্পিউটার কর্ম জীবনে ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে খুলে দিয়েছে একের পর এক নতুন দিগন্ত ।

অনেক জন মানুষের কাজ একমুহূর্তে নির্ভুল ভাবে করতে পারে কম্পিউটার। দৈনন্দিন জীবনে সবকাজেই রয়েছে কম্পিউটারের ব্যাবহার।ব্যাংকের কাজ নির্ভুল ও তাড়াতাড়ি করে দেয়। শেয়ার বাজারকে নির্ভুল প্রদর্শন করে।

  1. কলেজ অফিস আদালত সমস্ত ক্ষেত্রে তথ্য জমার কাজ করে।চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও কম্পিউটারের ব্যাবহার উল্লেখযোগ্য। মুদ্রণ শিল্পে স্কুলএক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে কম্পিউটার। কম্পিউটারে উপলব্ধ ইন্টারনেট পরিষেবা গোটা পৃথিবীকে এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। আমরা সব কিছুই এখন ঘরে বসে এই কম্পিউটারের মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। 

শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কম্পিউটার অবদান বর্ণনা করতে হলে শুরুতেই শিক্ষক্ষেত্রে কম্পিউটারের ভূমিকা নিয়ে বলতে হবে। আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির অনন্য বাহন কম্পিউটার। কম্পিউটারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশে শিক্ষাদান করা হচ্ছে।

কম্পিউটারের অনলাইন ক্লাসরুম, ডিজিটাল ক্লাসরুম ব্যবস্থা শিক্ষাক্ষেত্রে এনেছে নতুন এক অধ্যয়। বিজ্ঞান, ভূগোল, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ে নানারকম চিত্র ও ভিডিও প্রদর্শনির মাধ্যমে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, ফলে ছাত্র ছাত্রীরা নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে।

পরীক্ষার ফলাফল তৈরি, উচ্চশিক্ষায়, বিভিন্ন গবেষণায় এমনকি শিক্ষার বাহন পুস্তক প্রকাশনাতেও কম্পিউটার অবদান রেখে চলছে প্রতিদিন। 

চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ  কম্পিউটার চিকিৎসাক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছে।  সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিতে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রূপ দেওয়ার পেছনে রয়েছে কম্পিউটার। এর মাধ্যমে ওষুধ প্রদান, অনলাইন ডাক্তার দেখানে থেকে শুরু করে চিকিৎসাক্ষেত্রে নতুন নতুন গবেষণা হচ্ছে।

এছাড়াও বিভিন্ন মহামারির নিয়ন্ত্রণ যেমন সহজ হয়েছে তেমনি বড় বড় কঠিন অস্ত্রপাচারও আজকাল কম্পিউটারের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। ফলে রোগ প্রতিরোধ যেমন আগে থেকে সহজ হয়েছে তেমনি প্রতিকারেও কম্পিউটার রাখছে অবদান।

 যোগাযোগ ক্ষেত্রে কম্পিউটারঃ কম্পিউটারকে আরো প্রাণ দিয়েছে বর্তমান ইন্টারনেট ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই আমরা পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে থাকা কাছের মানুষের সাথে যেমন কথা বলতে পারছি, তেমনি তাদেরকে দেখতেও পাচ্ছি। শুধু কি তাই? কম্পিউটারের মাধ্যমে আমরা চিঠি লিখতে পারছি খুব সহজেই, যা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া যায় প্রাপকের কাছে। 

কম্পিউটার ও বেকার সমস্যা:

কম্পিউটার নামক যন্ত্র দানবের ক্ষমতা অপরসীম। অনেকজন মানুষের কাজ একাই কম সময়ে কম খরচে নির্ভুল ভাবে করতে পারে কম্পিউটার তাই দিন দিন বাড়ছে বেকারত্ব। কল্প বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা মানুষের দ্বারা আবিষ্কৃত এই যন্ত্র দানবকে দিয়ে কাজ করাতে করাতে একদিন এমন সময় আসবে,যখন কাজের ক্ষুধায় উন্মত্ত দানব তার সৃষ্টিকর্তা মানুষকেই করবে ক্রীতদাস।

মানুষের কাজ করতে করতে কম্পিউটার বিশাল সংখ্যক মানুষকে করবে বেকার। তবে এই মন্দদিকের বাইরেও কম্পিউটারের সাহায্যে অনেক বেকার যুবক ঘরে বসে তাদের বেকার সমস্যা দূর করতে পারছে। ফ্রিল্যান্সিং, আউটসোর্সিং করে তারা ঘরে বসেই আয় করতে পারছে।

কম্পিউটারের অপব্যবহারঃ

কম্পিউটার নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের একটি বিশাল বড় আবিষ্কার। সকল জিনিসের যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি তাদের কিছু মন্দ দিকও থাকে। যেকোনো কিছুর অপব্যবহার নিঃসন্দেহে সেই আবিষ্কারকে করে ফেলতে পারে মানুষের জন্য অভিশাপ।

কম্পিউটারের অপব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার অপরাধ, হ্যাকিং ইত্যাদি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিতে পারছে বেশ কিছু অসাধু মানুষ। এছাড়াও একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে থাকার ফলে মানুষের পিঠে ব্যাথা, চোখে সমস্যাসহ আরো অন্যান্য শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে মানসিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে এবং শরীরের ক্ষতি হচ্ছে।

ছাত্র ছাত্রীদের জন্য কম্পিউটার যেমন তাদের শিক্ষাগ্রহণের পদ্ধতিকে আরো সহজ করেছে। তেমনি কম্পিউটারের নেশা ছাত্রছাত্রীদেরকে তাদের পড়ালেখা থেকে দূরেও ঠেলে দিচ্ছে। অধিক সময়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকায় তারা বেশ কিছু মানসিক সমস্যাতেও ভুগছে। এছাড়া কম্পিউটার প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসি, চাঁদাবাজি, ব্লেকমেলসহ আরো অনেক ধরণের অপরাধ বেড়ে চলছে।   

কম্পিউটার আশির্বাদ না অভিশাপ এই নিয়ে যে দ্বন্দ্ব তার অবসান হয়তো কোনোদিনও ঘটবেনা।এ ক সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে কম্পিউটার ব্যাবহারের ফলে সরকারি ক্ষেত্রে চাকরি সংখ্যা ক্রমশই হ্রাস পেয়েছে যা প্রায় ৩০ শতাংশ।

কিন্তু পাশাপাশি অন্য ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ কিছু বেড়েছে। কম্পিউটারের মতো এক অন্যতম প্রযুক্তি বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আধুনিক সভ্যতা একবারেই অচল। এই কম্পিউটারের মাধ্যমে চাকরির সকল আবেদন ঘরে বসেই করা যাচ্ছে।সকল সার্কুলারও এইখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

ব্যাবহারের পার্থক্যের কারণে কখনও কখনও ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ালেও সব মিলিয়ে কম্পিউটার আধুনিক জীবনে এক শুভ পরিবর্তন এনেছে তা স্বীকার করতেই হবে।

আমরা যদি সঠিক পথ অনুসরণ করে এই কম্পিউটারের ব্যবহার করতে পারি, তাহলে আমাদের এই দেশকে প্রযুক্তির দিক থেকে অনেক এগিয়ে নিতে পারব। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles