দেহের মধ্যে খাদ্য পরিপাক

আমাদের দেহে চার ধাপে খাদ্য পরিপাক হয়ে দেহের জন্য শোষণ উপযোগী খাদ্য তৈরি করে।

দেহের মধ্যে খাদ্য যে চার ধাপে পরিপাক হয় তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ

(a) মুখে পরিপাক

মুখগহ্বরে দাঁত ও জিহ্বা সাহায্য খাদ্য চিবানোর ফলে খাদ্যবস্তুু ছোট ছোট টুকরায় পরিনত হয়। এ সময় লালাগ্রন্থি থেকে লালা নিঃসৃত হয়ে খাদ্যের সাথে মিশে যায়।

লালা খাদ্যবস্তুুকে গলাধঃকরণে সাহায্য করে। লালায় টায়ালিন বা স্যালাইভারি অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক থাকে। এটি শ্বেতসারকে মলটোজে পরিনত করে।

মুখগহ্বর থেকে খাদ্যদ্রব্য পেরিস্টলসিস প্রক্রিয়ায় অন্ননালীর মধ্য দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। পৌষ্টিক নালিগাত্তের পেশির পর্যায়ক্রমিক সংকোচন ও প্রসারণের ফলে খাদ্যদ্রব্য সামনের দিকে অগ্রসর হয়।

(b) পাকস্থালীতে পরিপাকঃ

পাকস্থলীতে খাদ্যবস্তুু আসারপর অন্তঃপ্রাচীরের গ্যাস্ট্রিকগন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরিত হয়। এ রসে যে উপাদানগুলো থাকে তা হলোঃ

হাইড্রোক্লোরিক এসিডঃ হাইড্রোক্লোরিক এসিড  খাদ্যের মধ্যে কোনো অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে,নিষ্কীয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিনত করে এবং পাকস্থলীতে পেপসিনের সুষ্ঠু কাজের জন্য অম্লীয় পরিবেশ সৃষ্টি করে।

পেপসিনঃ এক ধরনের এনজাইম, যা আমিষকে ভেঙে দুই বা ততোধিক অ্যামাইনো এসিড দিয়ে তৈরি যৌগ গঠন করে, যা পলিপেপটাইড নামে পরিচিত।

শর্করা এবং স্নেহজাতীয় খাদ্য সাধারণত পাকস্থালীতে পরিপাক হয় না। কারন এদের পরিপাকের জন্য গ্যাস্ট্রিক রসে নির্দিষ্ট কোনো এনজাইম থাকে না। পাকস্থলীতে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছানো মাত্র রসগুলো নিঃসৃত হয়।

পাকস্থলীর অনবরত সংকোচন ও প্রসারণ এবং এনজাইমের ক্রিয়া ফলে খাদ্য মিশ্র মন্ডে পরিনত হয়। একে পাকমণ্ড বলে। এই মন্ড অনেকটা স্যুপের মতো কপাটিকা ভেদ করে ক্ষুদ্রান্ত্রে প্রবেশ করে।

(c) ক্ষুদ্রান্ত্রে পরিপাকঃ

পাকস্থলী থেকে পাকমণ্ড ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিউডেনামে প্রবেশ করে।  এসময় অগ্নাশয় থেকে একটি ক্ষারীয় পাচকরস ডিওডেনামে আসে।  এই পাচকরস  খাদ্যমন্ডের অম্নভাব প্রশমিত করে।

পাচকরসের এনজাইম দিয়ে শর্করা এবং আমিষ পরিপাকের কাজ চলতে থাকে এবং স্নেহজাতীয় খাদ্য পরিপাক শুরু হয়। যকৃৎ থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়। এটি অম্নভাবকে ক্ষারীয় করে পরিপাকের উপযোগী করে তোলে।

পিত্ত লবণ স্নেহজাতীয় খাদ্যের ক্ষুদ্র কনাগুলো পানির সাথে মিশতে সাহায্য করে। পিত্ত লবণ পিত্তরসের অন্যতম উপাদান। লাইপেজ নামক এনজাইমের কাজ যথাযথ সম্পাদনের জন্য পিত্তলবণ গুরুত্ব পূর্ণ। 

এ লবণের সংস্পর্শে স্নেহপদার্থ সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র দানায় পরিনত করে। স্নেহজাতীয় লাইপেজ এই দানাগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারলে পরিনত করে।

অগ্নাশয় রসে অ্যামাইলেজ লাইপেজ ও ট্রিপসিন নামক এনজাইম থাকে। আন্তিক রসে অ্যামাইলেজ,লাইপেজ, মলটেজ, ল্যাকটেজ ও সুক্রেজ এনজাইম থাকে।

আংশিক পরিপাককৃ্ত আমিষ ক্ষুদ্রান্ত্রে ট্রিপসিনের সাহায্য ভেঙে অ্যামাইনো এসিড এবং সরল পেপটাইডে পরিনত করে। অ্যামাইলেজ শ্বেতসারকে সরল শর্করায় পরিনত করে।

(d)বৃহদান্ত্রে পরিপাকঃ

কোলন পাকমণ্ডের কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া বা পরিপাক ঘটে না। তবে খাদ্যের অসার অংশের সাথে যে পানি থাকে, তা এখানে শোষিত হয়।তাছাড়া থাকে কিছু আমিষ, লিপিড, লবণ এবং উদ্বৃত্ত এনজাইম। 

এসব বস্তুু থেকে বৃহদান্ত্র লবণ ও পানি শোষন করে রক্তে স্থানান্তরিত করে। ফলে উচ্ছিষ্ট খাদ্য ঘনীভূত হয়ে মলে পরিনত হয়। এই মল মলাশয়ে জমা থাকে এবং প্রয়োজন মতো পায়ুপথ দিয়ে বের হয়ে আসে।

আর এই ভাবে আমাদের দেহের ভিতরে খাদ্য গুলো পরিপাক হয় এবং দেহের জন্য উপযোগী খাদ্য তৈরি করে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles