ইউটিউব কি? কিভাবে ইউটিউব এ ক্যারিয়ার গড়বেন [ বিস্তারিত এখানে ]

ইউটিউব (ইংরেজি: YouTube) এটি একটি ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট।

একজন মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার সবচেয়ে প্রিয় ওয়েবসাইট কোনটি? অথবা, যদি বলা হয় মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারে আপনি কোন সাইটে সর্বাধিক সময় ব্যয় করেন?

কিভাবে ইউটিউব এ ক্যারিয়ার গড়বেনতাহলে আমাদের বেশির ভাগ থেকে যে উত্তরটি আসবে তা হল ইউটিউব। কেননা গুগলের পরই, অ্যালেক্সা র‌্যাঙ্ক অনুসারে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সাইট এটি।

হ্যাঁ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো ইউটিউব। এই পোস্টি আমরা যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করতে চলেছি

ইউটিউব কি :

গুগোল বা অন্যান্য ওয়েবসাইটের মত ইউটিউবও হলো একটি তথ্য আদান প্রদানের মাধ্যম। তবে এখানে সকল প্রকার তথ্য ভিডিও আকারে প্রকাশ করা হয়। সংজ্ঞা দিতে গেলে বলতে হয়- ইউটিউব বর্তমান বিশ্বের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম।

তবে এখনকার এই যুগে এই সঙ্গাটি কতটা সংগতিপূর্ণ তা আপনি নিজেই হয়তো আন্দাজ করতে পারছেন। বর্তমানে এটি একটি ভিডিও শেয়ারিং সোসাল প্লাটফর্ম ছাড়াও গান, সিনেমা, নাটক কিংবা বিনোদনের আরো নানান রকম ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ বা ডকুমেন্ট এর এক বিশাল আর্কাইভ এ পরিণত হয়েছে।

এছাড়াও বর্তমানে অনেকের আয় এর উৎস হিসেবেও এটি কাজ করছে। কেননা গুগলের অংশ হওয়ার পর থেকে এডসেন্স এর মাধ্যমে অ্যাড দেখিয়ে অর্থ উপার্জন করাও যাচ্ছে। বর্তমানে এর হেডকোয়ার্টার যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান ব্রুনোতে অবস্থিত।

ইউটিউব এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পেপ্যাল এর তিনজন প্রাক্তন কর্মচারী চেড হ্যরলি, স্টিভ চেন এবং জাওয়েদ করিম ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মসে বিশ্বের মানুষের কাছে ইউটিউব নিয়ে আসেন। ইউটিউবের ডোমেইন (YouTube.com) সর্বপ্রথম কার্যকর করা হয় ২০০৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে এবং ভিডিও আপলোড করার অপশনটি ঐ বছরেরই এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখে সংযুক্ত করা হয়। প্রথমদিকে ইউটিউবের সদর দপ্তর ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাতেওতে একটি পিজ্জারিয়া এবং জাপানি রেস্তোঁরার উপরে।

আপনি হয়তো জানেন না যে, যখন ইউটিউব শুরু করা হয়েছিল তখন কিন্তু সেটা কোনো সার্বজনীন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসেবে তৈরি করা হয়নি। মূলত একটি ডেটিং সাইট হিসেবেই ইউটিউবের সূচনা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তা ব্যর্থতার প্রকল্প হিসেবে একটি ব্যতিক্রমী ভিডিও আপলোডিং এবং শেয়ারিং প্লাটফর্মে পরিণত হয়।

আপনার মনে এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রশ্ন এসেছে যে, কে ইউটিউবের সর্বপ্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিল?? ইউটিউবেরই একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম, তিনি একটি চিড়িয়াখানার ব্যাকগ্রাউন্ডে এবং ‘মি এট দ্যা যু’ টাইটেলে ইউটিউবের ইতিহাসে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন।

বর্তমানে যার ভিউ প্রায় ১২০ মিলিয়ন এবং লাইকের সংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন এর কাছাকাছি। পর্দার পিছনে চেড হ্যারলি তার আর্টিস্টিক দক্ষতা দিয়ে ওয়েবসাইটের লোগো এবং এর লুক ডিজাইন করেন।

আর চেন লক্ষ্য রাখেন ওয়েব পেজটি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এবং ভিডিও আপলোডিং আর প্লেব্যাক প্রক্রিয়াতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।। করিম যেহেতু একজন প্রোগ্রামার ছিলেন তাই তিনি ডিজাইন এবং প্রোগ্রামিং এর বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য রাখতেন।

YouTube এ  একাউন্ট  এবং Chanel যেভাবে খুলবেন।

১। একটি জিমেইল একাউন্ট অবশ্যই লাগবে

২। youtube.com এগিয়ে সাইন ইন এ জিমেইল একাউন্ট দিয়ে লগইন করতে হবে

৩। লগইন করার পর Create Channel  অপশনে ক্লিক করতে হবে
তাদের দেওয়া ধাপগুলো সঠিকভাবে পূরণ করে চ্যালেন তৈরি করতে হবে।

৪। চ্যানেল তৈরি হয়ে গেলে প্রয়োজনীয় মানসম্মত প্রোফাইল পিকচার কভার ফটো ইত্যাদি আপলোড করে চ্যানেল সম্পূর্ণ করুন।

৫। চ্যানেল তৈরি সম্পন্ন হলে সেটি অবশ্যই ভেরিফাই করতে হবে। অন্যথাই ইনকাম সম্ভব না।  Verify এর জন্য Status & feature পাশে Verify Option  এ ক্লিক করতে হবে করুন মোবাইল নাম্বার দিয়ে অবশ্যই ভেরিফাই করতে হবে।

৬। চ্যালেনের জন্য সঠিক একটি নাম নির্বাচন  করতে হবে চ্যালেনের নাম অবশ্যই  সুন্দর মানসম্মত দিতে হবে, অবশ্য যে বিষয় এর ওপর ভিডিও Upload করবেন সে বিষয়ে সাথে মিল রেখে দিতে পারেন এতে ভিডিও সাবস্ক্রাইবার নিকট পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি যে বিষয়ের উপর ভিডিও তৈরি করতে দক্ষ,  ঐ বিষয়টির ওপর ভালো জ্ঞান আছে এমন বিষয় নিয়ে চ্যালেন ওপেন করা উচিত।

অর্থাৎ ভিন্ন ক্যাটাগরির জন্য ভিন্ন ভিডিও চ্যানেল তৈরি করা উচিত।

৭। চ্যানেলের  জন্য একটি নির্দিষ্ট ট্যাগ ব্যবহার করা ভালো সাধারনত চ্যানেল ট্যাগ ব্যবহার করলে, ব্যবহারকারীরা আপনার চ্যানেল টি অতি সহজে খুজে  পাবে।

অর্থাৎ আপনি যখন একটি ট্যাগ ব্যবহার করবেন তখন কোন ইউটিউব ব্যবহারকারী যখন ওই ধরনের ট্যাগ ব্যবহার করে সার্চ করবে তখন আপনার ভিডিওটি ওই সার্চ এ চলে আসবে। সামনে যার ফলে ব্যবহারকারী আপনার ভিডিও এর প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

ভালো ট্যাগ সার্চের জন্য TubeBuddy, BidIQ ব্যবহার করতে পারেন।

এতক্ষণ জানালাম কিভাবে চ্যানেল ক্রিয়েট করতে হয় ও তার খুটি-নাটি কিছু বিষয়।

ইউটিউব এর অগ্রগতি

২০০৫ সালের মে মাসের দিকে একটি বেটা সার্ভিস চালু করার পর থেকে ইউটিউব দৈনিক প্রায় ৩০০০০ ট্রাফিক পেতে শুরু করে। এরপর ২০০৬ সালের মার্চের মধ্যেই ইউটিউবে মোট ভিডিও সংখ্যা দ্বারায় ২৫ মিলিয়নেরও অধিক এবং প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজারের মত ভিডিও আপলোড হতে থাকে।

২০০৬ সালের মধ্যেই ইউটিউব www এর অন্যতম ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং সাইটে পরিণত হয়। তবে সবকিছুর মাঝে ইউটিউব কিছু সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়। এত এত ভিউ আর ইউজারদের জন্য কপিরাইট নিয়ন্ত্রণ এবং ফলে নতুন করে তাদের ব্রডব্যান্ড কানেকশনের উন্নয়ন করার প্রয়োজন হলো। ঠিক এই সময়ে গুগলের নবসংযোজন তাদের নিজেদের ভিডিও প্লাটফর্ম গুগল মিট কিছুটা ব্যর্থ হতে চলেছিল।

তার কিছু দিন পর ২০০৬ সালের ৯ অক্টোবরে সিদ্ধান্ত হয় গুগুল ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইউটিউব কিনে নিবে। আর সেটা কার্যকর করা হয় নভেম্বরের ১৩ তারিখ। বর্তমানে গুগলেরই একটি সহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউটীউব পরিচিত।

ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ

আজ পর্যন্ত গুগোল এর পরেই বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সাইট হল ইউটিউব। দিন দিন ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তাই বলে এই নয় যে, ভবিষ্যতেও এর জনপ্রিয়তা বহাল থাকবে। পোস্টের এই অংশে আমরা আলোচনা করব ইউটিউব এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে-

ভবিষ্যতে ইউটিউব বন্ধ হবার চান্স আছে কি ?

ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমাদের মাথায় আসে সেটি হল, সামনের আগামী বছরগুলোতে কি কখনো ইউটিউব বন্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে?

এর উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় সম্পূর্ণভাবে ইউটিউব বন্ধ হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে অনেক দেশেই ইউটিউবে ডোমেইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দেশগুলো সংখ্যা বাড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

এর মূল কারণ হয়তো আপনি ইতিমধ্যে আন্দাজ করে ফেলেছেন। দিন দিন ইউটিউবে অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল তথ্য বহুল ভিডিও এর সংজ্ঞা বেড়েই চলেছে। কেননা ইউটিউব এর নিজস্ব ফিল্টার মাধ্যম নেই। যার মাধ্যমে এটি সেখানে আপলোডকৃত ভিডিও এর কোয়ালিটি জাজ করতে পারে না। তবে ইউটিউব প্রতিনিয়তই তাদের ফিল্টারগুলো আপডেট করতেছে।

তাছাড়া বর্তমানে ইউটিউবারদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে এবং তাদের অধিকাংশেরই তেমন ভালো একটা শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এর দরুন নবাগত ইউটিউবারদের মাধ্যমে যেসব ভিডিও আপলোড করা হয় তার অধিকাংশই সঠিক এবং নির্ভুল তথ্যের বহির্ভূত। I এছাড়াও যতই দিন যাচ্ছে এমন সব ইউটিউব চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যেখানে অনেক অসামাজিক কিংবা অশ্লীল ভিডিও আপলোড করা হয়।

এসব কারণ বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, ইউটিউব যদি এভাবে এসব দিক অপেক্ষা করতে থাকে তবে হয়তো ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে পারে।

ইউটিউবারদের ভবিষ্যৎ কি ?

ইউটিউব এর ভবিষ্যতের সঙ্গে ইউটিউবারদের অর্থাৎ যারা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে থাকেন তাদের ভবিষ্যৎও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আজকাল অনেক মানুষেরই একমাত্র আয়ের এর উৎস হল ইউটিউব। ইউটিউবিং করেই আজ অনেক যুবক তাদের নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকাও আয় করছেন। তাই একটি দেশে যদি ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে সেদেশের সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে ইউটিউবাররা। আর এসব দিক বিবেচনা করে, আমরা অনুমান করতেই পারি যে ভবিষ্যতে ইউটিউব বন্ধ করার চান্স খুবই কম।

একজন সফল ইউটিউবার এর ভবিষ্যৎ তাই নিতান্তই উজ্জ্বল বলে বিবেচনা করা যায়। তবে একজন সফল ইউটিউবার হতে হলে প্রয়োজন সঠিক দক্ষতা এবং উতকৃষ্ট সৃজনশীলতা। যা সবার মাঝে পাওয়া যায় না। আপনি যদি একজন ভালো ইউটিউবার হতে চান , তাহলে প্রথমে ভালো কিছু করতে শিখুন।

নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু কন্টেন্ট তৈরি করুন যেগুলো অন্য সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আপনি যদি ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে বলবো আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জল। তবে একটি কথা আপনার মনে রাখা খুব প্রয়োজন, সবাই কিন্তু সফল ইউটিউবার হতে পারে না।

তাই কেবলমাত্র এর উপর ভরসা করে আপনার অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন পড়াশোনা থেকে নিজেকে কখনো বিচ্যুত হতে দিবেন না। যদি দেন তবে আপনি নিজেকে অচিরেই এক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবেন। আশা করি, কথাগুলো আপনি বুঝতে পেরেছেন।

এরপর আরেকটি যে বিষয় নিয়ে কথা না বললেই নয়, তা হল ইউটিউব করে সারা জীবন ধারাবাহিকভাবে ইনকামের অনিশ্চয়তা। এখন ধরলাম, আপনি একজন অনেক বড় ইউটিউবার হয়ে গেছেন। আপনার প্রতিটি ভিডিওতে প্রায় এক লক্ষের মত ভিউ হয়। আর এর সুবাধেই আপনি একটি ভাল পরিমাণের ইনকাম করতে পারছেন। তবে আপনি কি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে আপনার এই আয় সারা জীবন একই গতিতে চলবে ? না।

কারণ আপনার ভিডিও কতজন দেখবে, দেখবে না, তা কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এমনটাও হতে পারে, প্রথম প্রথম আপনার তৈরি ভিডিওগুলো খুব জনপ্রিয় হলেও কিছুদিন পর সেগুলো এর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলতে পারে। এটি বলছি, কারণ এমন নজিরও অনেক পাওয়া গেছে। তাই আমি বলব, ইউটিউবিং কে প্যাশন হিসেবে নিলেও পেশা হিসেবে না নেওয়াটাই উত্তম।

তবে এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। এখন সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার, আপনি কি করবেন বা আপনার ভবিষ্যৎ কি আপনি কিভাবে দেখতে চান তা সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করছে।

ইউটিউব কি এবং কিভাবে তৈরি হলো ? ইউটিউবারদের ভবিষ্যত কি ?

একজন মোবাইল বা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আপনার সবচেয়ে প্রিয় ওয়েবসাইট কোনটি? অথবা, যদি বলা হয় মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারে আপনি কোন সাইটে সর্বাধিক সময় ব্যয় করেন? তাহলে আমাদের বেশির ভাগ থেকে যে উত্তরটি আসবে তা হল ইউটিউব। কেননা গুগলের পরই, অ্যালেক্সা র‌্যাঙ্ক অনুসারে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সাইট এটি।

হ্যাঁ আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো ইউটিউব। এই পোস্টি আমরা যে বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করতে চলেছি-

ইউটিউব এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

পেপ্যাল এর তিনজন প্রাক্তন কর্মচারী চেড হ্যরলি, স্টিভ চেন এবং জাওয়েদ করিম ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারি মসে বিশ্বের মানুষের কাছে ইউটিউব নিয়ে আসেন। ইউটিউবের ডোমেইন (YouTube.com) সর্বপ্রথম কার্যকর করা হয় ২০০৫ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারিতে এবং ভিডিও আপলোড করার অপশনটি ঐ বছরেরই এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখে সংযুক্ত করা হয়।

প্রথমদিকে ইউটিউবের সদর দপ্তর ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার সান মাতেওতে একটি পিজ্জারিয়া এবং জাপানি রেস্তোঁরার উপরে। আপনি হয়তো জানেন না যে, যখন ইউটিউব শুরু করা হয়েছিল তখন কিন্তু সেটা কোনো সার্বজনীন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসেবে তৈরি করা হয়নি। মূলত একটি ডেটিং সাইট হিসেবেই ইউটিউবের সূচনা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তা ব্যর্থতার প্রকল্প হিসেবে একটি ব্যতিক্রমী ভিডিও আপলোডিং এবং শেয়ারিং প্লাটফর্মে পরিণত হয়।

আপনার মনে এতক্ষণে নিশ্চয়ই প্রশ্ন এসেছে যে, কে ইউটিউবের সর্বপ্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিল?? ইউটিউবেরই একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা জাওয়েদ করিম, তিনি একটি চিড়িয়াখানার ব্যাকগ্রাউন্ডে এবং ‘মি এট দ্যা যু’ টাইটেলে ইউটিউবের ইতিহাসে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন। বর্তমানে যার ভিউ প্রায় ১২০ মিলিয়ন এবং লাইকের সংখ্যা প্রায় ৫ মিলিয়ন এর কাছাকাছি। পর্দার পিছনে চেড হ্যারলি তার আর্টিস্টিক দক্ষতা দিয়ে ওয়েবসাইটের লোগো এবং এর লুক ডিজাইন করেন।

আর চেন লক্ষ্য রাখেন ওয়েব পেজটি ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এবং ভিডিও আপলোডিং আর প্লেব্যাক প্রক্রিয়াতে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।। করিম যেহেতু একজন প্রোগ্রামার ছিলেন তাই তিনি ডিজাইন এবং প্রোগ্রামিং এর বিভিন্ন বিষয় লক্ষ্য রাখতেন।

ইউটিউব এর অগ্রগতি

২০০৫ সালের মে মাসের দিকে একটি বেটা সার্ভিস চালু করার পর থেকে ইউটিউব দৈনিক প্রায় ৩০০০০ ট্রাফিক পেতে শুরু করে। এরপর ২০০৬ সালের মার্চের মধ্যেই ইউটিউবে মোট ভিডিও সংখ্যা দ্বারায় ২৫ মিলিয়নেরও অধিক এবং প্রতিদিন প্রায় বিশ হাজারের মত ভিডিও আপলোড হতে থাকে। ২০০৬ সালের মধ্যেই ইউটিউব www এর অন্যতম ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং সাইটে পরিণত হয়। তবে সবকিছুর মাঝে ইউটিউব কিছু সমস্যার মধ্যে পড়ে যায়।

এত এত ভিউ আর ইউজারদের জন্য কপিরাইট নিয়ন্ত্রণ এবং ফলে নতুন করে তাদের ব্রডব্যান্ড কানেকশনের উন্নয়ন করার প্রয়োজন হলো। ঠিক এই সময়ে গুগলের নবসংযোজন তাদের নিজেদের ভিডিও প্লাটফর্ম গুগল মিট কিছুটা ব্যর্থ হতে চলেছিল।

তার কিছু দিন পর ২০০৬ সালের ৯ অক্টোবরে সিদ্ধান্ত হয় গুগুল ১.৬৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইউটিউব কিনে নিবে। আর সেটা কার্যকর করা হয় নভেম্বরের ১৩ তারিখ। বর্তমানে গুগলেরই একটি সহ প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউটীউব পরিচিত।

ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ

আজ পর্যন্ত গুগোল এর পরেই বর্তমান বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় সাইট হল ইউটিউব। দিন দিন ইউটিউব এর জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। তাই বলে এই নয় যে, ভবিষ্যতেও এর জনপ্রিয়তা বহাল থাকবে। পোস্টের এই অংশে আমরা আলোচনা করব ইউটিউব এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে-

ভবিষ্যতে ইউটিউব বন্ধ হবার চান্স আছে কি ?

ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আমাদের মাথায় আসে সেটি হল, সামনের আগামী বছরগুলোতে কি কখনো ইউটিউব বন্ধ হবার সম্ভাবনা রয়েছে?

এর উত্তর দিতে গেলে বলতে হয় সম্পূর্ণভাবে ইউটিউব বন্ধ হবার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে অনেক দেশেই ইউটিউবে ডোমেইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই ধরনের দেশগুলো সংখ্যা বাড়তে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।

এর মূল কারণ হয়তো আপনি ইতিমধ্যে আন্দাজ করে ফেলেছেন। দিন দিন ইউটিউবে অপ্রয়োজনীয় এবং ভুল তথ্য বহুল ভিডিও এর সংজ্ঞা বেড়েই চলেছে। কেননা ইউটিউব এর নিজস্ব ফিল্টার মাধ্যম নেই। যার মাধ্যমে এটি সেখানে আপলোডকৃত ভিডিও এর কোয়ালিটি জাজ করতে পারে না। তবে ইউটিউব প্রতিনিয়তই তাদের ফিল্টারগুলো আপডেট করতেছে।

তাছাড়া বর্তমানে ইউটিউবারদের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে এবং তাদের অধিকাংশেরই তেমন ভালো একটা শিক্ষাগত ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। এর দরুন নবাগত ইউটিউবারদের মাধ্যমে যেসব ভিডিও আপলোড করা হয় তার অধিকাংশই সঠিক এবং নির্ভুল তথ্যের বহির্ভূত। I এছাড়াও যতই দিন যাচ্ছে এমন সব ইউটিউব চ্যানেলের সংখ্যা বেড়েই চলেছে, যেখানে অনেক অসামাজিক কিংবা অশ্লীল ভিডিও আপলোড করা হয়।

এসব কারণ বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে, ইউটিউব যদি এভাবে এসব দিক অপেক্ষা করতে থাকে তবে হয়তো ইউটিউব এর ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে পারে।

ইউটিউবারদের ভবিষ্যৎ কি ?

ইউটিউব এর ভবিষ্যতের সঙ্গে ইউটিউবারদের অর্থাৎ যারা ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করে থাকেন তাদের ভবিষ্যৎও অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আজকাল অনেক মানুষেরই একমাত্র আয়ের এর উৎস হল ইউটিউব। ইউটিউবিং করেই আজ অনেক যুবক তাদের নিজেদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি লক্ষ লক্ষ টাকাও আয় করছেন।

তাই একটি দেশে যদি ইউটিউব বন্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে সেদেশের সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবে ইউটিউবাররা। আর এসব দিক বিবেচনা করে, আমরা অনুমান করতেই পারি যে ভবিষ্যতে ইউটিউব বন্ধ করার চান্স খুবই কম।

একজন সফল ইউটিউবার এর ভবিষ্যৎ তাই নিতান্তই উজ্জ্বল বলে বিবেচনা করা যায়। তবে একজন সফল ইউটিউবার হতে হলে প্রয়োজন সঠিক দক্ষতা এবং উতকৃষ্ট সৃজনশীলতা। যা সবার মাঝে পাওয়া যায় না। আপনি যদি একজন ভালো ইউটিউবার হতে চান , তাহলে প্রথমে ভালো কিছু করতে শিখুন।

নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে এমন কিছু কন্টেন্ট তৈরি করুন যেগুলো অন্য সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে। এসব বিষয় মাথায় রেখে আপনি যদি ইউটিউবিং শুরু করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে বলবো আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জল। তবে একটি কথা আপনার মনে রাখা খুব প্রয়োজন, সবাই কিন্তু সফল ইউটিউবার হতে পারে না।

তাই কেবলমাত্র এর উপর ভরসা করে আপনার অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ, যেমন পড়াশোনা থেকে নিজেকে কখনো বিচ্যুত হতে দিবেন না। যদি দেন তবে আপনি নিজেকে অচিরেই এক ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিবেন। আশা করি, কথাগুলো আপনি বুঝতে পেরেছেন।

এরপর আরেকটি যে বিষয় নিয়ে কথা না বললেই নয়, তা হল ইউটিউব করে সারা জীবন ধারাবাহিকভাবে ইনকামের অনিশ্চয়তা। এখন ধরলাম, আপনি একজন অনেক বড় ইউটিউবার হয়ে গেছেন। আপনার প্রতিটি ভিডিওতে প্রায় এক লক্ষের মত ভিউ হয়। আর এর সুবাধেই আপনি একটি ভাল পরিমাণের ইনকাম করতে পারছেন।

তবে আপনি কি শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে পারবেন যে আপনার এই আয় সারা জীবন একই গতিতে চলবে ? না। কারণ আপনার ভিডিও কতজন দেখবে, দেখবে না, তা কিন্তু আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এমনটাও হতে পারে, প্রথম প্রথম আপনার তৈরি ভিডিওগুলো খুব জনপ্রিয় হলেও কিছুদিন পর সেগুলো এর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলতে পারে।

এটি বলছি, কারণ এমন নজিরও অনেক পাওয়া গেছে। তাই আমি বলব, ইউটিউবিং কে প্যাশন হিসেবে নিলেও পেশা হিসেবে না নেওয়াটাই উত্তম। তবে এ বিষয়ে অনেকে দ্বিমত পোষণ করেন। এখন সম্পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব আপনার, আপনি কি করবেন বা আপনার ভবিষ্যৎ কি আপনি কিভাবে দেখতে চান তা সম্পূর্ণই আপনার উপর নির্ভর করছে।

ইউটিউবের ভিডিও কি কোনোদিন শেষ হতে পারে ?

অবশ্যই না! যতদিন ইউটিউব থাকবে ততদিন এর ভিডিও এর সংখ্যাও বাড়বে। কেবলমাত্র, যদি না হেডকোয়ার্টার থেকে ইউটিউব নিয়ন্ত্রণকারীদের মাধ্যমে সকল ভিডিও ইরেজ করা হয়। আপনি, আমি সবাই জানি যে যতই দিন গড়াচ্ছে ইউটিউব এর ভিডিও সংখ্যা ততোই বাড়ছে । তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এমন কোনদিন আসবেনা, যেদিন ইউটিউব এর ভিডিও শেষ হয়ে যাবে।

আগামী ১০ বছরে ইউটিউবে কী কী যুক্ত হতে পারে ?

প্রথমেই যে জিনিসটির সংখ্যা বেড়ে যাবে তা হলো ইউটিউবের লাইভ টেলিকাস্ট। এছাড়াও সুপার চ্যাট কিংবা আরো কিছু জনপ্রিয় ফিচার ইতোমধ্যেই সবার সামনে চলে এসেছে। আশা করা যায় তা আরও বৃদ্ধি পাবে।

ইউটিউব বর্তমানে একটি ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম হিসাবে যেমন সুনাম কুড়িয়েছে তেমনি শিক্ষামূলত ভিডিও এর আপলোড বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যতম একটি অনলাইন শিক্ষার প্লাটফর্ম হিসাবেও খ্যাতি অর্জন করেছে। আশা করা যায় ভবিষ্যতেও এমনি ধারা অব্যাহত থাকবে। আর এটি সম্ভব কেবলমাত্র আমাদের সকলের প্রচেষ্টায়।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles