আমাদের ছোটবেলা।

ছোটোবেলাঃ কতইনা সু-মধুর ও আনন্দময় ছিলো আমাদের ছোটোবেলা। মোনে পড়ে যায় পিছনে ফেলে আসা আমাদের ছোটোবেলার স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা। আবার ফিরে যেতে মোনে চায় আমাদের ছোটোবেলার হাড়িয়ে যাওয়া সেই দিনগুলিতে। সেই মজুমদারমাঠ, স্কুল, নদীর পাড়, খাল-বিল­­, সরিষা ক্ষেত এইগুলোর সব কিছুর প্রত্যেক পরোতে পরোতে মিসে আছে আমাদের হাড়িয়ে যাওয়া ছোটোবেলার সেই স্মৃতি।

একটু নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য শহরের কোলাহল ছেড়ে ছুটে আইসি গ্রামে। গ্রামে ঢুকতেই মোনে পড়ে যায় স্মৃতিময় সেই আঁকাবাঁকা মেঠো পথটির কথা। যে পথ বেয়ে ছাইকেলর চড়ে ছুটে বেড়াতাম গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। দলবেধে লাফিয়ে বেরাতাম ছাইকেলের খোলা টায়ার নিয়ে। একে অপরকে ঠেলে বেড়াতাম অামাদের সেই কাঠ ও বেহারিং দিয়ে বানানো গাড়ি নিয়ে। হাটু কাদা ভেঙ্গে ছুটে চলতাম স্কুলের দিকে।

গ্রামের বৃক্ষরাজির দিকে তাকালেই মোনে পড়ে যায় স্মৃতিবিজড়িত শতবর্ষী সেই বট বৃক্ষের কথা। যে বৃক্ষের ছায়াতলে বসে আমরা দক্ষিণাবাতাসে জুড়িয়েছি অামাদের প্রান, যে বট বৃক্ষের মগ ডালের চুড়ায় বসে একটু মোন খুলে কতো যে, গেয়েছি গান, এখানে খেলেছি কতো খেলা, সেই বট বৃক্ষটি আজও যখন চোখে ভাষে তখনই মোনে করিয়ে দেয় সেই স্মৃতি।

যখনই ছুটে চলে যাই স্মৃতিবিজড়িত আমার সেই প্রীয় খেলার মাঠটির দিকে, তখনই মোনে পড়ে যায় আমার সেই প্রীয় খেলা গোল্লাছুট, দাড়িয়বান্দ, কানামাছি ভোভো, ক্রিকেট, ফুটবল আর হাডুডর কথা। ভাগ্যে নির্ম্মপরিহাস মাঠটি আর আগের মতো নেই। আগের মতো এখানে খেলে না কেহ আর গোল্লাুট, দাড়িয়াবান্দা, না খেলে কেহ আর ক্রিকেট, ফুটবল। এখানে সুধু পড়ে আছে ইট, বালু আর বরোবরো পাথর খোয়ার কংক্রিটের স্তুপ ।

যখনই যাই ছুটে আমার জীবনের হাতে খরি হওয়া স্মৃতিবিজড়িত সেই প্রীয় স্কুলটার দিকে! তখনই মোনে পড়ে যায় অামার হাড়ানো স্কুল জীবনর সেই স্মৃতি। যেখান থেকে শুরু হয়েছিলো আমার জীবনের প্রথম পথ চলা। এই স্কুলটিতে পড়াশুনার পাশাপাশি করেছি কতো দুষ্টামি-ফাজলামো, বকনী আবার পড়শোনা ও ভালো কাজের জন্য ভালোবাসাটাও পেয়েছি সবার আগে।আবার স্কুল ছুটির শেষে আমের দিনে আম গাছ থেকে আম চুরির কথা মাথায় থকতো সবার আগে।

স্কুলটা আগের জায়গায় থাকলেও নেই তার পূরানো রুফ, নেই আমার সেই পূরানো শ্রোদ্ধাভাজন শিক্ষক মৌলভী স্যার, গণিত শিক্ষক মোসলেম স্যার, ইংরেজি শিক্ষক তৌহিদ  স্যার, পিওন নুরু কাকু অার সহপাঠীদের না হয় বাদি দিলাম তাঁদের সবার কথা আমার আজও মোনে পড়ে। মাঝেমধ্যে স্কুল ছুটি শেষে বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিতে চলে যেতাম গ্রামের ধারে দিঘীর পাড়ে। সবাই মিলে বাদাম, ফুচকা খেতাম আমরা।

যাই ছুটে যখন নদীর পাড়ে, তখনই  মনে পড়ে ছোটোবেলার সেই দলবেধে হইহুল্লোর কথা। এখানে করেছি একে অপরে কাদা ছোড়াছোড়ি',  দল বেধে উচু জাগা থেকে নদীতে দিয়েছি লাফ, পানিতে করেছি ঝাপাঝাপি, আবার সাতার কেটে দিয়েছি নদী পাড়। আমায় যেনো এইগুলো সবই স্মৃতি হয়ে ডাকছে আবার।

যখনই দেখি ছোটোদের ছিপে বর্শি গাথা, তখনই আমারও মোনে পরে যায় ছোটোবেলার সেই খালে-বিলে মাছ ধরার কথা। দলবেধে মাছ ধরার দৃশ্যটাই যেনো ছোলো অন্যরকম। দলবেধে নেমে পড়তাম পড়তাম খালে পানো সেচে মাছ ধরতে। একটু ভুল ত্রুটি হলেই একে অপরে করতাম গালাগাল।

ছোটোবেলায় সেই  ধর মাছ দিয়ে আমরা সবাই মিলে চড়ই ভাতে করতাম। মাঝেমধ্যে লাইন ধরে দাড়িয়ে যেতাম ছিপে বর্শি গেথে মাছ ধরতে। আবার বর্ষায় রাতের বেলায় বিলে পানি হলেই বেরিয়ে পরতাম কোচ আর খেপলা জ্বাল নিয়ে। অার দিনের বেলায় চলে যেতাম শাপলা শালুক খুজতে।

শীতের অপুরন্ত বিকেল যখনই দেখতাম গাছির খেজুরগাছ কাটা, তখনই মোনে পড়ে যেতো বন্ধুরা মিলে সেই খেজুররস চুরি করে খাওয়াত কথা। ছোটোবেলার সেই চুরি করা খেজুররস দিয়ে আমরা বানাতাম খেজুরগুড় আর নানা ধরণের পিঠা পায়েস। শীতের সকালের ভোরের কুয়াশায় যখনই দেখতাম ছোট্টো শিশুরা দলবদ্ধ হয়ে মক্তবে যায়, তখনই মোনে পড়ে যায়  শিশির ভেজা শীতের সকালে মক্তবে যাওয়ার কথা। অাজো শুনতে পাই আমি শিশুদের দলবদ্ধভাবে সেই আরবি পড়া।

বাবা-মার পাশে এসে যখনই বসি, তখনই মোনে পড়ে যায় বাবার করা ছোটোবেলার শ্বাসন অার ভালোবাসার কথা। এখোনো মোনে পড়ে যায় বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়া, কোথাও ঘুরতে যাওয়া অবার তার কাছে কিছু অাবদার করা। আর মায়েরতো কোনো তুলোনাই হয় না, তিনি আমাদের ছোটোবেলায় নিজ হাতে গোসল করাতেন, কাপড় পড়াতেন, মুখে তুলে ভাত খাওয়াতেন।

গান গেয়ে আমাদের ঘুম পাড়াতেন। আর একটু অসুস্থ হলেই মা সর্বক্ষন আমাদের পাশে থাকতেন। ছোটোবেলায় তার কাছে কিছু আবদার করতেই সাথেসাথে পূরণ করতেন মমতামই মা। আর ছোটোবেলায় দাদা-দাদু, নানা-নানুর কথা অতুলোনীও। 

বসন্তের নীল আকাশের দিকে যখন তাকাই, তখন মোনে পড়ে যায় ছোটোবেলার খোলা নীল আকাশে দক্ষিণা মুক্ত বাতাসে রঙ্গ বে রঙ্গের ঘুরি ওড়ানোর কথা। রাতের আঁধারে দেখতাম জোনাকির আলো, সুনতাম বাঁশির সুর। আর বৈশাখের রাতে দলবেধে ধরতাম ভাওয়ালী গানের  সুর।

ছোটোবেলার এই স্মৃতিগুলি অসলেই অতীত, সেটা আর কখনোই কারও জীবনেই ফিরে আসবেনা।

ক্লিক করে আরও পড়ুন..

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles