তামিস্রা- ১ তখন আমায় নাইবা মনে রাখলে?

তামিস্রা

চোখ বন্ধ করলেই ভূমন্ডলের সমস্ত কিছু চোখে এসে বাসা বাঁধে।নভোমণ্ডলের সমস্ত তারকারাজি মিটমিট করে চোখের পলকে নৃত্য করে। চোখ বন্ধ করলেই অবসর যেন দূরে চলে যায়।অবসাদ এসে চিনচিন করে ব্যাথা দেয় বুকে।চাঁদের আলো মাঝে, মাঝে মনকে সজাগ করে তোলে। হাত বাড়িয়ে দৃষ্টির সীমারেখা দেখায়।

তবু্ও মাঝে মাঝে ছায়া ফেলে দেয় বিষমিশ্রিত অমৃতের মতো। তিলতিল করে তৈরি করা শক্ত, বাঁধন ছিড়ে যেতে উদ্ধত হয় শেষ চিহ্ন একে দিতে। 

আমি তোমাকে অবলোকন করতে সারাদিন অপেক্ষায় থাকি। সারাদিনের কোলাহল কানে বাজেনা,শুধু অপেক্ষা কখন আসবে আমার তামিস্র । 

তোমায় বেঁধেছি বাঁধনে শত জঞ্জাল পিছনে ফেলে।করিতে অবলোকন গহীনেরও মাঝে। নাহি পশ্চাৎ,নাহি কভু মান অভিমান, নাহি যোগ অভিযোগ। শুধু অবলোকন, শুধু অবগাহনে পাইতে তোমায়,চাইতে তোমায় ।

মোহমায়ায় তোমার কাছে পরাজিত হয়ে, সেই কবেই যেন আমি নিজেকে বিসর্জন দিয়েছি।একটু, একটু করে এগিয়ে, এখন প্রায় তোমার দুয়ারে। হাত বাড়লেই ধরতে পারি তোমায় মনে হয়। তবু্ও অধরার দেয়াল বরাবরই বাঁধা হয়ে দাড়ায়।এমন কেন অদৃষ্টের খেলা? 

কেন তোমায় ছুতে পারিনা? বার,বার কেন সেই অবহেলিতের দুয়ারে তালা? সময় তো অল্প বটে! সূর্য্য রশ্মি বধ করবে তোমায়।তখন থাকবোনা আমি, থাকবেনা আমার মায়া।থাকবেনা অপলক দৃষ্টির চাওয়া।

তখন নাইবা মনে রাখলে।

নিয়ম যেখানে ভশ্ম হয়ে যাওয়া। নিয়ম যেখানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া। নিয়ম যেখানে শুধুই হারিয়ে যাওয়া। সেখানে পাওয়ার প্রাধান্যতা মিলবে না আর তামিস্রা।

আমি আবারও ভোর থেকে অপেক্ষায় তামিস্রা।তোমার মাঝে খেলবে কখন সেই আলোর খেলা। আমি বিহ্বলিত, চমকিত আস্ফালনের নেশায় ছুটে যাবো,হাত বাড়িয়ে ছুতে পারবো,আমি মিলিয়ে যাবো,বিলিয়ে দিয়ে সব । 

তামিস্রা জানি তোমার কোন প্রজনন নেই। আমি জানি তামিস্রা তোমার কোন সীমানা নেই। কিন্তু আমার সীমানা আছে, প্রজনন আছে। আছে শক্তির ক্ষয়।

আমার সময় বড়ো অল্প। তোমার মাঝে খুঁজতে আমি হারিয়ে ফেলেছি অজস্র ক্ষন।আমি চলতে চাইলেও তোমার বাঁধা থমকে দেয় আমাকে। এভাবে হয়তোবা তোমায় পাওয়া হবেনা। 

অবশেষে

তামিস্রা এলো কাছে, কিন্তু অদৃষ্টের নির্মমতা তাকে ছুয়ে দেখার স্বাধ আমার পূর্ণ হলোনা। তামিস্রা আমার ছুয়েছে।তামিস্রা আমার তার বুকের বাঁধনে শক্ত করে বেঁধেছে। আমার দৃষ্টিতে কোন উচ্ছ্বাস নেই। শরীরে লেশমাত্র জৌলুস নেই। আমি তখন বাঁধনহারা নই।আমি বাঁধনে আটকে পরা এক অসহায়ের গল্প হলাম তোমার কাছে তামিস্রা।

নিষ্ঠুর তামিস্রার আঘাত আমাকে জীবনের অবসর দিয়েছিলো।আমি আর ভোর থেকে অপেক্ষা করিনা তামিস্রার জন্য। 

সবাই ব্যাস্ত আমাকে শুইয়ে দিতে। কারো চোঁখে সময়ের ব্যাবধানে জলের ছটা।রক্তের বাঁধনের আর্তনাদ কারো বুকে। কারো মনের গহীনে দীর্ঘশ্বাস।কখনও বা রক্তের পরিচয়ে গগনবিদারী আত্ম চিৎকার। 

কারও কাছে উত্তরাধিকারের দাবির খসড়া। কেহ দায়িত্বের যবনিকা টানতে ব্যাস্ত।কেউ তামিস্রার সাথে বসবাসের সীমানা নির্ধারনে ব্যাস্ত।

তখন তামিস্রার শুধু অপেক্ষা। তার কোন আক্ষেপ নেই। তার কোন আনন্দ নেই। শুধু কাছে ডাকাতে ব্যাস্ত।

আমাকে সাজাতে কেউ ব্যাস্ত।কেউ সুগন্ধি ধোঁয়া উড়াতে ব্যাস্ত। কেউ নতুন বসন পরিয়ে দিয়ে তমিস্রাকে আহবানে ব্যাস্ত।

জীবনের কোন এক বাসনায় তামিস্রার কাছে লেখা চিঠিটা বিদায় বেলায় একবার পরেছিলো আমার অস্তপারের সঙ্গীরা।

তামিস্রা

তোমাকে পেতে আমার কতটা সময় লেগে যাবে আমি জানিনা।আমার বুকে অনেক মায়ার বাঁধন আঁকড়ে আছে। তোমাকে আমি যদি পেয়ে যাই তখন এই বাঁধন ছিড়ে যাবে। তাদের অনেক কষ্ট হবে, আর এজন্য আমি তোমাকে চাইনা। 

তোমাকে পেয়ে আমি তাদেরকে হারাতে চাইনা। তুমি দূরে থেকো,দূরে চলে যাও।তোমায় আমি খুঁজতে চাইনা।

আমার সময় হবেনা তোমাকে খুঁজতে, তোমাকে অবলোকন করতে। তুমি আমাকে বাঁধন হারা জীবনের বিনাশ ঘটিওনা।

ইতি অদৃষ্টের পুতুল। 

আমি মৃত লাশ এখন। আমার ভাবনা কেউ বুঝবেনা।

তমিস্রা

শুধু তোমার ছলনায় তোমার কাছে যাবার চেষ্টা ছিলো আমার। তুমি বেশ দূরেই থেকেছো।তোমার ছলনা আমি না বুঝেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছি তোমার কাছে। 

আমার মায়ার বাঁধন ছিড়ে গেছে। আমার ভালোবাসার কষ্ট হচ্ছে তুমি কাছে এলে বলে।তামিস্রা তবুও আমি তোমার কাছে। তোমার বুকে মাথা রাখলাম। শেষ হলো তা শেষ অধ্যায় তামিস্রা।

আমার মৃতদেহ মৃত্তিকায় খাবে।উর্বর হবে ভুমি। চাহিদার অবসান হবে। পৃথিবীর গননার খাতায় কমে যাবে আমার হিসাব। একটা দেহের বিনাশ হবে। পৃথিবী মনে রাখবেনা আমাকে তামিস্রা।

পৃথিবী জীবনের যবনিকা শেষ হলো। তায় তোমাকে বলছি।

তখন নাইবা মনে রাখলে। তারার পানে চেয়ে চেয়ে। নাইবা আমায় ডাকলে?

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments
Sakhawat Hossain - Jul 15, 2021, 3:44 PM - Add Reply

তামিস্র - মানে -অন্ধকার।

You must be logged in to post a comment.

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles