তুমি দাঁড়িয়েছিলে আনমনে

টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির মুখরতা আর প্রকৃতির সতেজতার সংমিশ্রণে এক অপূর্ব শিহরণ জাগে দেহ মন জুড়ে। নিস্তব্ধতায় বিভোর তখন হৃদয় গহীনে।আর প্রিয় মানুষের অস্তিত্ব তখনই অনুভূত হয় বৃষ্টির আমন্ত্রণে।

কেন জানি তোমার কথা অনেক বেশি মনে পড়ছে।তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবতে ইচ্ছে করছে, লিখতেও ইচ্ছে করছে। তোমাকে এক নজর দেখার জন্য মন আকুল হয়ে আছে। 

রোজ সকাল ১০ টায় আমার ঘরের জানালা দিয়ে তোমাকে এক নজর দেখার প্রতীক্ষায় অপেক্ষার প্রহর গুনি।আমার বাড়ির সামনে দিয়েই তো তুমি অফিস যাও।

অনেক দিন ধরে ভাবছি তোমায় নিয়ে লিখব। আজ তোমাকে নিয়ে লিখতে বসেছি। আচ্ছা, কোন নামে তোমাকে ডাকা যায় আমার গল্পে,বলো তো?আমার ঠিক মাথায় আসছে না। দ্বিধায় পড়ে গেলাম।  থাক, নামের ব্যাপারটা পড়ে দেখা যাবে।

জানো তো, কিছুদিন ধরে ভাবছি, তোমাকে আরো একটা কথা বলব।যেটা বলব বলব করেও এখনো  বলা হচ্ছে না।বলতে যদিও একটু অসস্তি লাগছে কারণ সেদিনের সেই ডিরেক্ট প্রপোজ করাটা তোমার পছন্দ হয় নি।কিন্তু, তুমি আবার এটা ভেবো না যে, আজকেও আমি তোমাকে ভালবাসি। 

I love u.. Will u marry me..এসব বলব আবার। হা হা হা। না না, এসব কথা না।আমি এসব আর বলতে চাই না। কারণ আমি জানি, তুমি আমার ভালোবাসার প্রস্তাবে কখনোই রাজি হবে না।নিজের পরিবার ছেড়ে,দায়িত্ববোধ কে ফাঁকি দিয়ে কখনোই আমার ভালোবাসার ডাকে সাড়া দিবে না।

আর আমিও কখনো জোর করব না। জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা পাওয়া যায় না। কিন্তু, আমিও যে ভুলে থাকতে পারি না। আমার প্রথম প্রেম বলে কথা। তোমাকে আমার জীবনে পাব না আমি জানি  কিন্তু তোমাকে আমি সবসময় সুখী দেখতে চাই।

জীবনের কোন না কোন অধ্যায়ে এসে আমি হয় তো নতুন কোন পর্ব শুরু করব। তারপরও তোমার জন্য আমার বুকের মধ্যখানে যে জায়গা তৈরি হয়েছে সেটা রয়েই যাবে।সেখানে আর কারও জায়গা হবে না। ওই যে বললাম প্রথম প্রেম বলে কথা। আমি জানি না আমার জন্য তোমার কেমন অনুভূতি। আর আমি জানতেও চাই না।

ভালোবাসা এমনই। ভালোবাসার যে অনেক রং ।দূর থেকে ভালোবাসার মাঝেও যে অদ্ভুত রকমের সুখ আছে সেটা সবাই বুঝতে পারে না। ভালোবাসার পরিণতি সবসময় একে অপরকে পাওয়া হবে সেটাই বা হবে কেন। 

ধুর ছাই! কখন থেকে কি যে বলে যাচ্ছি।যে কথাটা বলতে চাই সেটিই বলতে পারছি না। আর তুমিও তাহলে তখন থেকে আমি কি বলতে চাই জানতে চাও নিশ্চয়ই। 

নাহ, আর অপেক্ষা নয়।এবার বলেই ফেলি।যে কথাটা বলতে চাই সেটা হলো..

তোমাকে একটু স্বার্থপর হতে হবে । হ্যাঁ,স্বার্থপর। কি অবাক হলে কি,এ কথা শুনে?যে লাবণ্যময় ভঙ্গিতে বলাটা শুরু করেছিলাম, এখন এসব কি বলছি তাই তো? 

শোনো, মন দিয়ে শোনো? আরে নিজের ভালো তো পাগলেও বোঝে। তুমি কেন বুঝতে চাও না?সারাক্ষণ সংসারের চিন্তা,সংসারের সবার জন্য চিন্তা, কিছু না কিছু করেই যাচ্ছো।নিজেকে কি একটুখানি সময় দিতে ইচ্ছে করে না।

ইচ্ছে কি করে না, বাইরের বিশাল আকাশটাকে নিজের  মত করে পেতে, শিশির ভেজা সবুজ মাঠের দূর্বা ঘাস মাড়িয়ে সতেজতার সান্নিধ্যে কি আসতে ইচ্ছে করে না।

হিম ঝরা বিকেলে ইচ্ছে কি করে না বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলতে। সমুদ্রের নীল জলে পা ভেজাতে কিংবা মুক্ত বিহঙ্গের মতো ছোটাছুটি করতে মন চায়না বুঝি। কখন ও কি মন চায় নি,  নীল শাড়ি আর নীল টিপে নিজেকে বিলাসিতার চাদরে জড়িয়ে রাখতে।

খোঁপায় কি ঘুচতে ইচ্ছে করে না নীল জবা ফুল। কখনো কি হতে ইচ্ছা করে না বনলতা সেন  হতে, তিলোত্তমা কিংবা শুভ্রা। কখনো ইচ্ছে করে না বুঝি গোধূলি রঙে রাঙা নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে থাকতে।।কখনো কি ইচ্ছে করে না ভালোবাসার প্রিয় মানুষটিকে সাথে নিয়ে হাতে হাত রেখে হাঁটতে  কিংবা বৃষ্টিতে কি একসাথে ভিজতে ইচ্ছা করে না।

ইচ্ছা কি করে  না রিকশায় করে সারা ঢাকা শহর ঘুরতে। আঙ্গুল আঙ্গুল রেখে সূর্যাস্তের দৃশ্য একসাথে দেখার স্বাদ কি মনের কোণে উঁকি দেয় না।

ওহহহহহ!বুঝতে পেরেছি এসব করলে পরিবারের সকল মানুষের কথা কে ভাববে। কে ভাববে তাদের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের কথা। রোজ সকালে কে সকলের জন্য খাবার তৈরি করবে,কে রোজ ভাইয়ের জন্য ডিম পরোটা তৈরি করবে আর  বোনের টিফিন রেডি করে দেয়া বা তার কলেজ ব্যাগ পর্যন্ত গুছিয়ে দিবে।

কে মাকে  সুগার ফ্রী চা আর বাবাকে রোজ সকালে  হাঁটাতে নিয়ে যাবে। তাদের সপ্তাহে সপ্তাহে শরীর চেক আপ এর  জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে।

কিন্তু তোমার নিজের শরীরে একটু জ্বর আসলে দোকান থেকে প্যারাসিটামল এনেও খাও না যাতে কিছু টাকা বাঁচিয়ে মাটির ব্যাংকে জমিয়ে রাখতে পারো।সংসারে রান্নার জন্য ঘাম ঝরিয়ে একাই বাজার করো। এ

কাই রান্না করো এবং পরিবারের সবাইকে  ভালো মন্দ খাওয়ানোর পর নিজে খাও।কখনো শুধু ডাল দিয়ে বা মাছের তরকারিতে বেঁচে থাকা একটু ঝোল দিয়ে না  হয় মাংসের ঝোলে এক টুকরা হাড় দিয়ে।তারপরও নেই কোন আক্ষেপ। 

সত্যিই অাস্ত এক ভালো কে কি ভালো না বলে পারা যায়। 

ক'টা টাকা বাঁচানোর জন্য রিকশায় না চড়ে পায়ে   পর্যন্ত হেঁটে অফিসে যাও। আবার পায়ে হেটে  অফিস থেকে বাসায় ফিরো রোজ ক্লান্ত হয়ে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানিও বের করে খাওয়ার মতো সময়টা তোমার থাকে না  ।আবার পুরোদমে শুরু করো তোমার সাংসারিক কাজ। 

কি অদ্ভুত জীবন।এরই মাঝেই রয়েছে কিছু কিছু মানুষের  বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস।যারা অন্যদের ভালে দেখে নিজেরা ভালো থাকে। অন্যদের খারাপ দেখলে নিজেরা কষ্ট পায়।অন্যের সুখের মাঝে নিজেদের সুখের ঠিকানা খুঁজে পায়। এমন অনেক মানুষ আছে ঠিক তোমার বিপরীত। 

তারা শুধু নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে । ব্যস্ততার বেড়াজালে বন্দী থেকে তো তারা আপনজনদের কথাই ভুলে যায়।কাড়ি কাড়ি টাকা উপার্জন করে।

কিন্তু সুখ খুঁজে পায় না। অনেকে মনে করে টাকার মাঝেই পৃথিবীর সব সুখ। কিন্তু সুখ নামক অলীক বস্তু তো টাকা দ্বারা কেনা যায় না। সুখ থাকে মানুষের প্রতি মানুষের ভালেবাসার মাঝে।

অন্যকে সুখী দেখার মাঝে,অন্যের জন্য কিছু করার মাধ্যমে।যেমনটা তুমি তোমার সমস্ত সুখ খুঁজে পেয়েছো তোমার পরিবারের মাঝে। তোমার পরিবারকে সুখী করতে দিন রাত পরিশ্রম করছো।ঘরে বাইরে নিজেকে আবদ্ধ রেখেছো।

এত কিছুর মাঝেও যে তুমি হাসতে ভুলো নি,এটাই বা কম কিসের। এরই মাঝে  তো পেয়েছো বেঁচে থাকার অক্সিজেন। 

কারও ওপর নেই তোমার কোন অভিযোগ, নেই কোন দায়বদ্ধতা। মা,বাবা,ভাই,বোন সকলেরই মুখের হাসির মাঝে নিজের সুখ খুঁজে নিয়েছো।কি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা!তোমার সংসার জীবন যে  চিরকাল ঋণী তোমার কাছে।

 প্রতিদিনকার মতোই একদিন অফিস থেকে হাঁটতে হাঁটতে  বাসায় যাচ্ছিলে।বেখেয়ালি বশত হঠাৎ হোঁচট খেলে।পায়ে অনেক ব্যথা পেয়েছিলে।কিছুক্ষণের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলে।চোখ বন্ধ করে ব্যথাটাকে হজম করার চেষ্টা করেছিলে।সারা রাস্তা খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিলে।

তোমার কষ্ট দেখে রাস্তায় দুপাশে বিশ্রাম নিতে বসে থাকা শালিক পাখিরাও বিমর্ষে মূর্ছা যাচ্ছিল। রাস্তার দুধারে ফুটে থাকা অসংখ্য ঘাসফুল যেন  নুয়ে পড়ছিল।আকাশটা হঠাৎ করে মেঘলা হয়ে যাচ্ছিল।মনে হচ্ছিল বৃষ্টি নামবে। প্রকৃতি যেন বৃষ্টির স্পর্শ পাবার অভিপ্রায়ে অপেক্ষা করছে। 

তুমি তখন আস্তে আস্তে হেঁটে ঘরে প্রবেশ করলে। ঘরে প্রবেশ করেই চেপে রাখা আর্তনাদ মুহূর্তেই বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

কি মনে পড়ে? যাদের জন্য এত সংগ্রাম, যাদের হাসিমাখা মুখ দেখার জন্য  এত পরিশ্রম তাদের(মা, বাবা,ভাই, বোন) প্রাণবন্ত হাসি, উচ্ছ্বাস দেখে পায়ের ব্যথা কেমন করে যে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল তা বুঝতেই পারো নি।

চারজনের একসাথে হাসি মাখা মুখ আর আনন্দের ঝর্ণাধারা বয়ে যেতে দেখে তোমার হৃদয়টা তৎক্ষনাৎ শীতল হয়ে গিয়েছিল।ক্ষণিকের সব ধরণের কষ্ট তখন নিমিষেই হারিয়ে গিয়েছিল।

আর তাদের এই আনন্দের মুহূর্তগুলো তুমি প্রত্যক্ষ চোখে দেখেছিলে দরজার এক কোণে দাঁড়িয়ে। আর ওরা তখন কেউ ই বুঝতে পারে নি তোমার উপস্থিতি  কারণ তুমি দাঁড়িয়েছিলে আনমনে?

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles