জীবনের অন্যতম পর্যায় বিয়ের শিক্ষনীয় আলোচনা

আপনি কি কোন মেয়েকে বিয়ের কথা ভাবছেন? তাহলে জেনি নিন, পাত্রী নির্বাচনের সঠিক মানদণ্ড।

পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সঠিক মানদণ্ড হল দুটি। যথা: সৌন্দর্য এবং দীনদারি। অর্থাৎ কোন নারীকে বিয়ের পূর্বে সর্ব প্রথম তার সৌন্দর্য অত:পর দীনদারি দেখা উচিৎ।

সুতরাং যদি কোনও মেয়ের প্রতি মনে প্রবল আকর্ষণ অনুভব করেন তাহলে শরিয়ত সম্মত পন্থায় বিয়ের জন্য অগ্রসর হোন। তারপর যদি তার দ্বীনদারি ঠিক থাকে তাহলে বিয়ে করুন; অন্যথায় বর্জন করুন। অর্থাৎ তাকে গ্রহণ ও বর্জন যেন হয় দ্বীনদারিকে কেন্দ্র করে-যেমনটি বলেছেন ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহ.।

তিনি বলেছেন:

إذا خطب رجل امرأة سأل عن جمالها أولا ، فإن حُمد سأل عن دينها ، فإن حمد تزوج، وإن لم يحمد يكون ردها لأجل الدين ، ولا يسأل أولا عن الدين ، فإن حُمد سأل عن الجمال ، فان لم يحمد ردَّها للجمال لا للدين

“কোন পুরুষ যদি কোনও নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তাহলে সর্বপ্রথম তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। যদি এ ব্যাপারে তার প্রশংসা করা হয় তাহলে তার দ্বীন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। দ্বীনের ক্ষেত্রে যদি প্রশংসিত হয় তাহলে বিয়ে করবে; অন্যথায় দীনের কারণে প্রত্যাখ্যান করবে। কিন্তু এমনটি করা ঠিক নয় যে, প্রথমেই দীন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। এ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলে তারপরে তার সৌন্দর্য সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে। তারপর সৌন্দর্যের ব্যাপারে প্রশংসনীয় না হলে ফিরিয়ে দিবে। তাহলে এ প্রত্যাখ্যান হবে সৌন্দর্যের কারণে; দীনের কারণে নয়। ” (শরহু মুনতাহাল ইরাদাত-ইমাম ভূতি ২/৬২১)

সৌন্দর্য:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

‏ إِذَا خَطَبَ أَحَدُكُمُ الْمَرْأَةَ فَإِنِ اسْتَطَاعَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى مَا يَدْعُوهُ إِلَى نِكَاحِهَا فَلْيَفْعَلْ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ فَخَطَبْتُ جَارِيَةً فَكُنْتُ أَتَخَبَّأُ لَهَا حَتَّى رَأَيْتُ مِنْهَا مَا دَعَانِي إِلَى نِكَاحِهَا وَتَزَوُّجِهَا فَتَزَوَّجْتُهَا ‏.‏

“তোমাদের কেউ যখন কোন নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিবে তখন সম্ভব হলে তার এমন কিছু যেন দেখে নেয় যা তাকে বিবাহে উৎসাহিত করে।”

বর্ণনাকারী বলেন, “আমি একটি মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেবার পর তাকে দেখার আকাঙ্ক্ষা-অন্তরে গোপন রেখেছিলাম। অতঃপর আমি তার মাঝে এমন কিছু দেখি যা আমাকে তাকে বিয়ে করতে আকৃষ্ট করলো। অতঃপর আমি তাকে বিয়ে করি।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-১৯, বিয়ের উদ্দেশে পাত্রী দেখা প্রসঙ্গ, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত-সনদ-হাসান]

আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত

ﻗِﻴﻞَ ﻟِﺮَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﻱُّ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗَﺴُﺮُّﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﻧَﻈَﺮَ ﻭَﺗُﻄِﻴﻌُﻪُ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻣَﺮَ ﻭَﻻ ﺗُﺨَﺎﻟِﻔُﻪُ ﻓِﻲ ﻧَﻔْﺴِﻬَﺎ ﻭَﻣَﺎﻟِﻬَﺎ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﻜْﺮَﻩُ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! কোন স্ত্রী সর্বোত্তম?

তিনি বলেন: “(স্বামী) যে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয়, কোন নির্দেশ দিলে আনুগত্য করে এবং সে তার নিজস্ব ব্যাপারে বা তার অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে স্বামী যেটা অপছন্দ করে তার বিপরীত কিছু করে না।” (মুসনাদে আহমদ। শাইখ আলবানি হাদিসটিকে হাসান বলেছেন। উৎস: সিলসিলা সহিহা, হা/১৮৩৮)

উল্লেখ্য যে, সৌন্দর্য বলতে কেবল বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য বুঝায় না বরং মন ও মননের সৌন্দর্য তথা বিশেষ গুণ-বৈশিষ্ট্য, জ্ঞান, মেধা, যোগ্যতা, বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিও এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও মানুষ কারো গুনাগণ বিচারের পূর্বে তার বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য অবলোকন করে। আর এ বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টিও আপেক্ষিক। সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। একজনের কাছে কাউকে আকর্ষণীয় মনে হলেও অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে। কারো কাছে ফর্সা ভালো লাগে তো কারো কাছে ভালো লাগে শ্যামলা।

সুতরাং বিয়ের পূর্বে এ দিকটি দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য হল, মনের পরিতৃপ্তি ও প্রশান্তি অর্জন করা-যা চরিত্র হেফাজত ও চোখ অবনমিত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সুতরাং আপনি যদি এমন মহিলাকে বিয়ে করেন যার দিকে তাকালে আপনার মনে আকর্ষণ সৃষ্টি হয় বা ভালো লাগে তাহলে স্বভাবতই মনে প্রশান্তি অর্জিত হবে এবং পরনারী থেকে দৃষ্টি অবনমিত রাখতে সহায়ক হবে (তবে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি)। এই সৌন্দর্য ও আকর্ষণবোধ ছাড়া দাম্পত্য জীবন বেশি দূর এগুনো সম্ভব নয়।

দীনদারি:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনদারী মেয়েকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:

হাদিসে এসেছে:

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ تُنْكَحُ النِّسَاءُ لأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ ‏”‏ ‏.‏

আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারীদেরকে (সাধারণত) চারটি বিষয় দেখে বিয়ে করা হয়। যথা:

ক. তার ধন-সম্পদ।

খ. বংশমর্যাদা।

গ. রূপ-সৌন্দর্য।

ঘ. এবং দীনদারি বা ধার্মিকতা।

তবে তুমি দীনদার (ধার্মিক) নারীকে বিয়ে করে সফল হয়ে যাও; অন্যথায় তুমি লাঞ্ছিত হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: বিবাহ, অনুচ্ছেদ-২ ধার্মিক মহিলা বিয়ে করার নির্দেশ, হা/২০৪৭-সনদ সহিহ]

আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ধার্মিকতা ও নীতি- নৈতিকতা হীন নারী একজন পুরুষের জন্য এবং তার পরিবার ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য মারাত্মক ফিতনা, অশান্তি এবং ধ্বংসের কারণ।

আল্লাহ তাআলা প্রতিটি পুরুষকে তার পছন্দের দীনদার নারীকে বিয়ে করার মাধ্যেম একটি সুস্থ ও সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়ার তওফিক দান করুন। আমিন।

লেখালেখি করে আয় করুন। বাংলাদেশী ইনকাম সাইট

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles