পিতৃত্বের অহঙ্কারকে নির্গত লক্ষ্য,লক্ষ কোটি, কোটি শুক্রানু মাতৃ জঠরের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে, আমি জিতেছিলাম। আমাতে, আমাতে প্রতিযোগিতার ফলাফল আমি। আর তখন ছিলাম ভাবনাহীন অপেক্ষায়।সময়ের একটা নিদৃষ্টতা ছিলো। আমি ছিলাম লক্ষ্যহীন।
আমার অহংকার ছিলোনা,ব্যাস্ততা ছিলোনা, ভালো মন্দের মানদণ্ডের হিসাব ছিলোনা। কল্পনা ছিলোনা, পার্থিব রহস্য ছিলোনা তখন আমার মাঝে। মহাসমুদ্রে ভেসেও ডুবে যাবার ভয় ছিলোনা।
আহার নিদ্রার কোন বত্যয় ছিলোনা। কারণ তখন প্রতিযোগিতার বর্ডার স্পর্শ করে, আমি আমার বরাদ্দকৃত বস্তুর সবই সময়মতো বুঝে পেয়েছি।
আমার চোখে আবরন থাকায় অবলোকন করতে পারিনি কোথায় আমি ভেসেছিলাম। আমি দেখিতে পারিনি কে আমাকে ভাসিয়েছেন সে অকূল সমুদ্রে। আমার ইন্দ্রীয়শক্তি তখন কাজ করেনি।জানতেও পারিনি খাদ্যের পরিমিত ব্যাবহার করেছিলাম নাকি উচ্ছিষ্টতা তৈরি করেছিলাম।
যাইহোক আমি নতুন যুদ্ধের বিশাল ময়দানে ভাসতে, ভাসতে তীরে উঠে এলাম।ঠিক তখন সূর্য্য আমাকে দেখা দিলো।আমার নয়নে এসে বললো আমি সূর্য্য অন্ধকারকে দূর করি আমার আলো দিয়ে।আমি তাহাকে প্রথম দেখি।আলোই হাসি আর আলোই কাঁদি।
দিনের শেষে অন্ধকার এসে আমার দৃষ্টিকে আড়াল করে ফেললো।এসেই বললো আমি অন্ধকার। পৃথিবীর অনেককিছুর স্বাক্ষী হই আমি।
কিছুক্ষন পরে চন্দ্র এলো। সে বললো আমি তাপহীন আলোর জ্যোতি।অন্ধকারকে ভয় দেখাই।
তারপর এলো তারা। বললো দিগন্তে বহুদূরে আমার অস্তিত্ব আছে। আমিও অন্ধকারকে বোকা বানিয়ে দিক নির্দেশ করি।অন্ধকারে হারাতে দেইনা কাউকে।
এবার গায়ে শিহরণ। বাতাস এসে বললো আমার অস্তিত্ব দেখা যাবেনা অনুভবে পাওয়া যায় আমাকে।আমি নির্দেশিত বলয়ে তোমার দেহে অক্সিজেন দেই।
এর পরে পানি এসে বললো আমি নির্দেশিত পথে প্রবাহিত হই।আমি তোমার প্রয়োজনকে উপেক্ষা করবোনা।
অনেক, অনেক এলো।আবার ভোরে সূর্য্য উঠলো। আলোকিত হয়ে গেল আমার চোখ। কিন্তু নয়নকে আমি দেখিনা।
আমি তখন আবার আলোর খেলায় মত্ত্ব হলাম।হাত পেলাম, পা পেলাম। হাত বললো আমি আমার নির্দেশিত পথে তোমার জন্য পরিচালিত হই।পা বললেন আমি আমার নির্দেশিত পথে তোমার জন্য পরিচালিত হই।
এভাবে পরিচয়ে আমি বড়ো হলাম। সব পরিচয় আমাকে বিমোহিত করেছে।প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছি নিজে,নিজেই।
প্রশ্ন এসেছে সবাই পরিচালিত হয়?আমিও পরিচালিত হই?কে আমার পরিচালক? কে এতোকিছু পরিচালনা করে?
একটা সময় আমি সার্বজনীন থেকে স্বাধীন হলাম। উত্তরের নেশায় বিভিন্ন পথে পরিচালিত হতে থাকলাম। ধর্মীও অনুভবের স্বাদ পেলাম।
বিশ্রান্ত দেহ আমার। এদেহে সৃষ্টি হলো আকাঙ্খা। জানবার স্পৃহা। আস্তে, আস্তে আমি অস্তিত্বের খোঁজ করতে লাগলাম।
কে আমি? আমার হতা কেন চলে?আমার পা কেন চলে?আমি কেন আহার করি?কেন নিদ্রা যাই?কেন ছোট থেকে বড়ো হলাম? বড়ো থেকেই কেন বড়ো হলাম না?
আসলে আমি বুঝতে পারিনি সেদিনের সেই প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যকে।আমি চিনতে পারিনি সেদিনের সেই পরিচালক কেন আমাকে ছোট থেকে বড়ো করেছে।
আসলে আমি সেদিন নির্দেশ অমান্য করিনি। সেদিন আমার নির্দেশ ছিলো পার হয়ে যেতে মহা সমুদ্র। আমাকে তীরে উঠবার নির্দেশ ছিলো মহা জাগতিক ভ্রমান্ডের সৃষ্টিকে অবলোকন করে শিক্ষা নেবার।
সবার পরিচয়ে আমাকে জানানো হয়েছিলো সৃষ্টির স্রষ্টা আছে তাকে চিনিবার।
আমি শুধু বোকার মতো ছোট থেকে বড়ো হলাম। সৃষ্টির সূতিকাগারে আমাকে রাখা হয়েছিলো। আমার আদিঅন্ত ওখানেই ছিলো। শুধু আমার স্পৃহাকে রদ করেনি সেই মহান। তায় আমি আলোর কাছে এলাম।অন্ধকারের কাছে এলাম।
আমাকে বুঝতে বলা হয়েছিলো আমি বুঝতে পারিনি। আমাকে দেখতে বলা হয়েছিলো আমি দেখতে পারিনি।
তোমাকে পারিনি দেখিতে আমি অথচ, তোমার জন্যই আমি পৃথিবীতে। আমি ভেদ করতে পারিনি তোমার রহস্যের চাদর। অথচ তোমাতেই আমার বসবাস।
এতো কাছে তবুও পাইনি তোমায় ধরিতে, ওগো দেখিতে।কেন লুকায়ে তব মোর আঁখিতে।দেখেনা আঁখি কখনও সে আঁখি, যে আঁখিতে তুমি নিভৃতে।
বৃথা এ জীবন যদি না পাই তোমায়।বৃথা এ জীবন যদি কূল না পাই, তোমারে যদি না দেখিলে।আমি হারায়ে খুঁজিতে হারায় বার,বার।দেখা দেও প্রভু হে।
স্রষ্টা সে তো তোমারই রুপ।তোমরা কেন খুঁজে বেড়াও পাথারে?
তোমাতেই আছে আল্লাহ খোদা।বাহিরে নাহি থাকে সে।
আমার আত্মা তৃপ্ত হোক তোমার দেখাতে।
You must be logged in to post a comment.