ঘরে বসে ওজন কমানোর উপায়

বাড়তি ওজন আমাদের একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। আর তাই আমরা অনেকেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাই। সাধারণত ওজন কমানোর জন্য আমরা খাওয়া কমিয়ে দেই অথবা দীর্ঘ সময় জিমে কাটাই।

তবে অতিরিক্ত কম খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টায় আমাদের শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ক্যালোরি না পেয়ে অপুষ্টিতে আক্রান্ত হতে পারে। শরীরের কোন ক্ষতি না করে, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ঘরে বসেও ওজন কমানো যায়। আসুন জেনে নেই:

ওজন কমানোর সহজ কিছু উপায়

ওজন কমানো আসলে খুব কঠিন কাজ নয়। একটু ইচ্ছে আর সামান্য ধৈর্য থাকলেই তা সম্ভব। আর তা যদি ঘরোয়া উপায়ে করা যায়, তাহলে তো আরো ভাল হয়।

বিভিন্ন ওজন কমানোর উপায় থেকে কার্যকর ফলাফল পেতে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে বিভিন্ন খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা, কর্মকাণ্ড গুলোর মধ্যে যেসব নিয়ম মেনে চলতে হবে সে বিষয়ে আলোচনা করা যাক-

১. খাবার বাছাই

ওজন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেখতে হবে, কোন খাদ্য আমাদের শরীরে অনেক বেশি সময় ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে।

এক্ষেত্রে গমের আটার রুটি আর সবজি খেতে পারি। বাইরের তেল মশলাযুক্ত খাবার না খেয়ে ঘরের খাবার খেতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারলে শরীরের জন্য ভালো। 

শস্য জাতীয় খাদ্য আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া সহজ ও স্বাভাবিক করে। এতে শরীর বেশকিছু সময়ের জন্য ব্যস্ত থাকে এবং সারা দিনের শক্তি উৎপাদন এবং বণ্টন হতে থাকে।

যার ফলে ক্ষুধার তীব্রতা হ্রাস পায়। বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় খাবারের প্রতি আকর্ষণ কমে। 

ডিম ছাড়া বেকড আইটেম এবং চিনি ছাড়া ফলের জুস খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ফাস্টফুডের পরিবর্তে প্রচুর ফল খাওয়ার অভ্যাস করুন। সপ্তাহে একদিন অন্য খাবার না খেয়ে শুধু ফল খেয়ে থাকতে পারেন।

২. ব্যায়াম 

স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পাশাপাশি ব্যায়াম আপনার ওজন দ্রুত হ্রাস করতে সহায়তা করে। ভারোত্তোলন ব্যায়াম ওজন হ্রাস এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। 

ওয়েট নিয়ে ব্যায়াম করার ফলে সেটি আপনার বিপাক ক্রিয়া বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা ওজন হ্রাস করতে কার্যকরী। এর পাশাপাশি বিভিন্ন রকম শরীরচর্চা আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করবে।

৩. গ্রিন টি

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন চার কাপ গ্রিন টি পান করলে প্রতি সপ্তাহে অতিরিক্ত ৪০০ ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় করা সম্ভব। গ্রিন টি-তে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি আমাদের দেহের ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন গ্রিন টি অবশ্যই পান করুন।

৪. ফোনে ঘুরে কথা বলুন

যখন ফোনে কথা বলবেন, তখন একটা জায়গায় বসে কখনই কথা বলবেন না। সব সময় ঘুরে ঘুরে কথা বলুন। এইভাবে ১০ মিনিটে ৩৬ শতাংশ ক্যালরি নষ্ট করতে পারবেন।

৫. পানি পান করুন

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন। পানি পানের কারণে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন বের করে দেওয়া সম্ভব হবে।

৬. চিনিকে পরিহার করুন 

চিনি খাওয়া একেবারে ছেড়ে দিন। এক চা চামচে মোট ১৬ শতাংশ ক্যালরি থাকে। তাই চায়ে বা দুধে কখনোই চিনি দিয়ে খাবেন না।

৭. তাড়াতাড়ি রাতের খাবার শেষ করুন

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাতের খাবার খেয়ে নিন। কারণ, রাতে খাবার খেয়েই শুয়ে পড়লে মোটা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

রাতের খাবার খেয়ে সাথে সাথে না ঘুমিয়ে কিছুক্ষণ হালকা হাটাহাটি করে তারপর ঘুমাতে যেতে পারেন। আর রাতে যদি ক্ষুধা পায় তখন এক গ্লাস দুধ খেতে পারেন।

৮. জগিং করুন

জগিং করার জন্যে বাইরে দৌড়াতে যাওয়ার কোনো দরকার নেই। পারলে নিজের ঘরের মধ্যেই জগিং করতে পারেন।

৯. দিনে ঘুম বাদ দিন

রাতে আট ঘণ্টা ঘুমানো খুবই দরকার। কিন্তু কখনই দিনের বেলায় ঘুমাবেন না। এতে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

১০. ধীরে ধীরে খান

যখন খাবার খাবেন, তখন তাড়াতাড়ি না খেয়ে ধীরে ধীরে খান। এতে আপনার পেট সঠিক ভাবে ভরবে। যদি খুব বেশি তাড়াহুড়ো করে খান, তাহলে প্রয়োজন থেকে অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলতে পারেন।

১১. খাওয়ার আগে পানি খান

খাবার খাওয়ার আগে সব সময় এক গ্লাস পানি খান। এ ছাড়া জাঙ্ক অথবা ফাস্ট ফুড একেবারেই খাবেন না। যেমন : ক্রিম বিস্কুট, বার্গার, পিজ্জা ইত্যাদি। যতটা পারবেন বাড়ির তৈরি খাবার খান। এতে শরীর ভালো থাকবে এবং মোটা হয়ে যাবেন না।

১২. ছোট প্লেটে খান

প্লেট বদলে ফেলুন। যে প্লেটে খাবার খান, তার থেকে ছোট সাইজের প্লেটে খান। এতে মনে হবে বেশি খেয়ে ফেলেছেন। তাই কম খাবার খেতে শুরু করবেন।

১৩. ক্ষুধা পেলে পপকর্ন খান

বাইরে বেড়াতে গেলেই শুধু পপকর্ন খাবেন না। যখনই খিদে পাবে, তখনই পপকর্ন খেতে পারেন। এটি কম ক্যালরি যুক্ত খাবার। তাই মোটা হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কম।

১৪. লিফটকে না বলুন

আমরা অনেকেই ওজন কমাতে চাই। কিন্তু কোনো কষ্ট করতে রাজি হই না। এক্ষেত্রে আমাদের বাসা, অফিস, শপিংসেন্টার যেখানেই যাই চার পাঁচ তলায় ওঠার জন্য লিফটের অপেক্ষা না করে সিঁড়ি দিয়ে ওঠার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

পরিশেষ 

অতিরিক্ত ওজন যেমন আমাদের জন্য বড় ধরনের সমস্যা তেমনি এর সমাধানও আমাদের চারপাশেই আছে।  আপনি চাইলে সহজেই ওজন কমানোর উপায় গুলোর মাধ্যমে আপনার অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন। এর জন্য আপনার ধৈর্য এবং ইচ্ছাশক্তি দরকার। 

তাই আগে থেকেই সতর্ক হয়ে উপায় গুলো মেনে চললে আপনার জন্য অধিক কার্যকর ফলাফল দিতে সক্ষম হবে এই উপায় গুলো। আপনারা বিশেষভাবে এই ওজন কমানোর উপায় গুলো অনুসরণ করতে পারেন। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles