Ex গার্লফ্রেন্ড যখন বস (অনেক আগের লেখা গল্প টা আমার আসা করি সবার ভালো লাগবে)
সকাল সকাল আব্বুর বকানি খেয়ে চাকরীর
ইন্টার্ভিউ দিতে বের হলাম। না জানি আজ কপালে
কি আছে। তবে আমি নিশ্চিত জবের জন্য আমি
সিলেক্ট হবো না। কারণ আগেও প্রায় ১০জায়গায়
ইন্টার্ভিউ দিয়েছি।আর প্রতিবারই ফলাফল এসেছে
আমি সিলেক্ট হয়নি।এটা নিয়ে আমার যে মাথা
ব্যথা তার থেকেও আব্বুর মাথা ব্যথা বেশী।
সব সময় শুধু কথা শুনাবে।চাকরীতে আমি সিলেক্ট
হয়না সেটা কি আমার দোষ।সে যায় হোক আজ।
এখন আমার পরিচয় দেয়া যাক,আমি আবির
হাসান নিলয়।বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আর
শুনতে হবে না।আস্তে আস্তে সব জানতে পারবেন।
ইন্টার্ভিউ রুমের বাইরে বসে আছি এমন সময়
একজন আমাকে ভিতরে যেতে বললেন।আর
বসে না থেকে রুমে গেলাম....
আমিঃস্যার আসবো?
কথাটি বলে ভিতরে থাকা মানুষ টাকে দেখে
নিজের কলিজা কেপে উঠলো। কারণ সামনে
জান্নাত।জান্নাতকে দেখে পা-টা কাঁপতে শুরু
করে দিছে।
শামিমঃএই যে মি. আপনি কি ভিতরে আসবেন
নাকি ওখান থেকে চলে যাবেন?
আমিঃইয়ে মানে....
শামিমঃকি মানে মানে করছেন।ইচ্ছা না থাকলে
চলে যেতে পারেন
কথাটি শুনে মন চাইছে সালাকে ইচ্ছামতো পিটাই
কিন্তু আব্বুর জন্য কিছু বলতে পারছি না।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে ভিতরে ডুকলাম।
শামিমঃপ্লিজ সিট
আমিঃজ্বি....
জান্নাতঃশামিম সাহেব এবং রেজাউল সাহেব
আমি একাই এনার ইন্টার্ভিউ নিবো।সো প্লিজ
আপনারা কোনো কিছু বলবেন না
রেজাউলঃজ্বি ম্যাডাম
জান্নাতের এমন কথা শুনে হার্টবিট বেরে গেলো।
এখন কি বলে আল্লাহ ভালো জানে।
জান্নাতঃসো মি. নিলয় এযাবৎ কতটা ইন্টার্ভিউ দিয়েছেন
আমিঃমাত্র ১০টা(নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম)
জান্নাতঃ১০টা দিছেন সেটাও আবার মাত্র
আমিঃজ্বি
জান্নাতঃআপনার কি এখনো লুচুমি করার অভ্যাস
আছে?
আমিঃসরি....আমাকে দেখে কি তাই মনে হয়?
জান্নাতঃদেখে তো অনেক কিছুই হয়।এখন
বলুন আপনার কি কোনো গার্লফ্রেন্ড আছে?
জান্নাতের কথা শুনে মন চাইছে সালিকে ধরে
ইচ্ছামতো পিটাই।কখন কি বলতে হয় এটাও
হয়তো জানে না।
জান্নাতঃকি হলো কথা বলছেন না কেনো?
আমিঃজ্বি মানে ছিলো বাট এখন নাই
জান্নাতঃকেনো...সময় শেষ তাই?
আমিঃনা তবে তার বাপের অনেক টাকা যার
জন্য অনেক অহংকার ছিলো।তাই ছেড়ে দিছি
জান্নাতঃকি বললি তুই...আমি অহংকার করতাম
আমিঃআরে আপনি রাগ করছেন কেনো?আমি
কি আপনাকে বলছি নাকি
শামিমঃম্যাডাম ওনি তো অন্য কারোর কথা বলছেন
জান্নাতঃওকে আমি সরি।এখন আপনি যেতে পারেন
আমিঃঠিক আছে।তবে ম্যাডাম আপনি আগের
অনেক কিউট হয়েছেন।
জান্নাতঃকেনো আগে কি খারাপ দেখতে ছিলাম
আমিঃশুধু খারাপ না। একদম পেত্নী...
আর কিছু না বলে দৌড়ে বাইরে চলে এলাম।
থাকলে না জানি পেত্নী সালি আমার ঘাড় মটকাতো
বাইরে বের হয়ে হাটতে লাগলাম।আমি জানি
এই জবটাও হবে না।আর অফিসে যে জান্নাতের
সম্পর্কে বললাম অহংকারী আর পেত্নী সেটা
একদম ডাহামিথ্যে কথা।অহংকার জিনিষটা
আসলে কি জান্নাত নিজে আধও জানে কি না
সন্দেহ। ওর বাবার এতো টাকা থাকার পরেও
ভার্সিটি যেতে রিক্সা করে।আর আমি যে একটা
ফকির। যাকে কিনা কোনো কিছুই গিফট করতে
পারিনি।তবে জান্নাতের এগুলো নিয়ে মাথা
ব্যথা ছিলো না।বরং সে নিজেই আমাকে পকেট
খরজের টাকা দিতো।আর পেত্নীটা...জান্নাতকে
দেখলে পরিরাও হিংসা করবে।নীল শাড়ি,খোলা
চুল,হাতে ভিন্নরকম চুড়ি আর কপালে ছোট একটা
টিপ ব্যাস যে কেউ ওকে দেখে ফিদা হয়ে যেতে
পারবে।
সে যায় হোক এসব ভেবে আর লাভ নাই।আমি
জানি এই জব আর হবে না।বাসায় গিয়ে ফ্রেস
হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
রাতে.....
খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে ফেসবুকিং করছি এমন সময়
একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসলো...
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
জান্নাতঃআমি জান্নাত তোর Ex
আমিঃঐ সালি তুই আবার আমারে কল করছিস কেনো
জান্নাতঃহুম করতে হলো।কারণ আমার বাবুটা
এখনো যে চাকরী করে না তাই চাকরী দেয়ার জন্য
কল করলাম।
আমিঃআমি তোর বাপের চাকরী করতে পারবো না
জান্নাতঃকেনো পারবে না?
আমিঃএমনি পারবোনা রাখ তুই
জান্নাতকে কিছু বলতে না দিয়ে কেটে দিলাম।
আর হ্যা ওকে আমি তুই করে বললাম। এটারও
কারণ আছে।আমি চাইনা আমার মতো বেকারকে
জান্নাত ভালোবাসুক।মাঝে মাঝেই জান্নাতকে
মনে পড়তো। তখন অনিচ্ছা সত্বেও চোখ দিয়ে
জল গড়িয়ে পড়তো।মেয়েটার সাথে সব সময়
খারাপ করেছি। জান্নাতকে ভালোবাসার কথা
আমিই প্রথম বলেছিলাম।আবার ব্রেকআপটাও
আমিই করেছিলাম।আমি চাইনা আমার জন্য
ওর জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক।আর কিছু না ভেবে
সেদিনের মতো ঘুমিয়ে গেলাম।
পরেরদিন.....
সকালের নাস্তা করার পর আড্ডা দেয়ার জন্য
বাসা থেকে বের হলাম।
জয়ঃকিরে আজ এতো সকাল সকাল
আমিঃনারে এমনি।আর বাসায় থাকতেও ভালো
লাগে না।সব সময় আব্বুর চাকরী নিয়ে কথা
বলা ভালো লাগে না
জয়ঃশুধু কি তুই একাই শুনিস আমি শুনি না
আমিঃতবে আব্বু ঠিকি বলে।আর কতোদিন
এভাবে চলবে
জয়ঃঠিক আছে এসব বাদ দে।রাহুল সিগারেট দে
রাহুলঃকেনো?
জয়ঃআরে সালা খাবো।
রাহুলঃকিন্তু নিলয়...!
আমিঃআজ আমিও খাবো
কথাটি বলার পর ওদের দুজনের দিকে তাকাতেই
মনে হলো ভুত দেখার মতো আতকে উঠেছে।
আমিঃকি হলো,,, এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?
রাহুলঃভাই আপনি কি নিলয়?
আমিঃনা তোর দুলাভাই দে সিগারেট দে
জয়ঃনিলয় পাগল হয়ে গেছিস নাকি।
আমিঃনা তবে তোরা সিগারেট না দিলে পাগল হবো
একপ্রকার জোড় করেই ওদের থেকে সিগারেট
নিয়ে খেতে লাগলাম।কখনো সিগারেট খাইনি
তবে আজ কেনো এটাই ভালো লাগছে।ওদের
সাথে আরো কিছু সময় আড্ডা দিয়ে বাসায়
চলে এলাম।
বাসায় এসে গোসল করে রুমে বসে আছি এমন
সময় আব্বু রুমে আসলো....
আব্বুঃনিলয় তোর চাকরীর কি হলো
আমিঃজানিনা।
আব্বুঃতোমাকে কল দেয় নি
আমিঃনা
আব্বুঃএকদম মিথ্যা বলবে না।অফিসের বস
আজ বাসায় এসেছিলো
আমিঃমা...মা..মানে?
আব্বুঃতোমার এতো মানে মানে করতে হবে না।
কাল থেকে তোমার জয়েনিং।
আমিঃকিন্তু আব্বু আমি এই জব করতে পারবো না
আব্বুঃদেখো নিলয় আমি আর কতোদিন এভাবে
সংসার চালাবো।এবার না হয় তুমি কিছু করো।
জানিনা তোমার এই জবটা করতে কি সমস্যা।
আর জানতেও চাই না তবুও তুমি এই জবটা করো
নিজের জন্য না হলেও আমাদের জন্য করো।
আব্বুর মুখের উপর আর কিছু বলতে পাড়লাম না।
তাই রাজি হয়ে গেলাম।তবে যতোটা সম্ভব জান্নাতকে
এড়িয়ে চলতে হবে।
পরেরদিন...
অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি এমন সময় আব্বু এবং
আম্মু রুমে এলো।
আমিঃকিছু বলবে?
আম্মুঃনা। তবে মন দিয়ে কাজ করবি।
আমিঃহুম।
আর কোনো কথা না বলে সকালের নাস্তা করে
আব্বু আম্মুকে বিদায় দিয়ে অফিসের জন্য রওনা
দিলাম।প্রায় ৩০মিনিট পর অফিসে এলাম।
চারদিকে একবার চোখ ভুলিয়ে দেখতে লাগলাম।
এমন সময় পিয়ন এসে বলল....
পিয়নঃআপনি কি নিলয়?
আমিঃজ্বি।
পিয়নঃম্যাডাম আপনাকে তার কেবিনে যেতে
বলেছেন....
আমিঃঠিক আছে যাচ্ছি।
সেখানে আর দাঁড়িয়ে না থেকে বসের কেবিনে
সামনে এসে দাঁড়ালাম।
আমিঃম্যাডাম আসবো?
জান্নাতঃহুম আসুন।বসুন এখানে
আমিঃধন্যবাদ।
জান্নাতঃনিলয় আমাকে কি আবার আপন করে
নেয়া যায় না?
আমিঃসরি।আর এখানে এসব না বললে খুশি
হবো।
জান্নাতঃকেনো?
আমিঃকারণ আপনি আমার বস।আর আমি
সাধারণ কর্মচারী।
জান্নাতঃকিন্তু নিলয় আমি....(থামিয়ে দিয়ে)
আমিঃজান্নাত প্লিজ আমাকে এমন কিছু বলো না।
যেনো এই জবটা ছেড়ে দিতে আমি বাধ্য হয়
জান্নাতঃঠিক আছে আর বলবো না।আমি পিয়নকে
বলে দিচ্ছি তোমাকে তোমার কাজ বুঝিয়ে দিবে
আমিঃধন্যবাদ।
আর বসে না থেকে বাইরে চলে এলাম।তারপর
পিয়ন এসে আমার কেবিন আর কাজ বুঝিয়ে
দিয়ে গেলো।প্রথম দিন তাই তেমন কোনো কাজ
ছিলো না।কয়েকজনের সাথে পরিচয় হয়ে নিলাম।
তেমন কোনো কাজ নেই তাই ম্যাডামের রুমে গেলাম..
আমিঃম্যাডাম আসবো
জান্নাতঃহুম আসো।আর কখনো আসার জন্য
পারমিশন নিতে হবে না।যখন ইচ্ছা তখন আসবে।
আর বলো কি হয়েছে?
আমিঃহাতে তেমন কোনো কাজ নেই তাই ভাবছি
বাসায় চলে যাবো।
জান্নাতঃওহ।ঠিক আছে সাবধানে যেও
আমিঃঠিক আছে
ম্যাডামের রুমে থেকে বের হয়ে কেবিনে থাকা
ব্যাগ নিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।
বাসায় এসে আম্মুর সাথে একটু কথা বলে রুমে
গেলাম।এরই মাঝে দুদিন চলে গেলো।
চলবে......
২য় পর্ব দিবো
You must be logged in to post a comment.