বাবু ইন্দ্রনীল
সময়ের সাথে, সাথে এবং জীবনযুদ্ধের কঠিন সময় পার করতে, করতে আপনার কথা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম।সত্যি জীবনের চাহিদাকে পূরণ করতে যেয়ে অনেক চেনা পথ হারিয়ে ফেলেছি । আকাংঙ্খা নয় বাবু প্রয়োজনের তাগিদে সময়কে ব্যাস্ত বানিয়ে নিজেকে নিয়ে বেশ ভালোই অবহেলা করে ফেলেছি।মাফ করবেন জানিনা আপনার, মন কেমন আছে? মন কেমন আছে জানতে চাইলাম এজন্য যে মনকে ভালো রাখলে শরীর ভালো থাকে?
বাবু আজ খুব মনে পরছে আপনার কথা। কবি বদরুল হায়দারের কথা । শাহবাগের কবিতার আসরের কথা। কবি বদরুল হায়দারের মন কেমন আছে, আপনি কি জানেন? যদি যেনে থাকেন তাহলে জানাবেন। উনি তো শরীর নিয়ে ভাবেননা, মনের ভালো নিয়ে চিন্তা করেন।আমিও তাই,আমিও মনের ভালো নিয়ে চিন্তা করি,কিন্তু?
বাবু আপনি কি জানেন পৃথিবীর মন ভালো নেই? পৃথিবীর উর্বর ফসল যা মানব রুপে এসেছে সেই মানব জাতির মন ভালো নেই? মহা সংকটের বলয়ে মানব জাতি আজ বন্ধি হয়ে গেছে। এই সংকটের পথ বড়োই উচু নীচু বাবু।
বাবু আতংক আমাকে খেয়ে ফেলেনি,কিন্তু আতকে উঠি বার,বার। কেন জানেন বাবু? পৃথিবী দিয়েছে আমাকে,আমি কি দিয়েছি পৃথিবীকে? আতকে উঠি কেন জানেন? পৃথিবী আমাকে অনেক দিয়েছে, আমি পৃথিবীর ওজন বাড়িয়ে দিয়ে বেঈমানী করেছি পৃথিবীর কাঠামোর সাথে।
বাবু আমার চিন্তার সাথে আপনি সহমত নাও পোষণ করতে পারেন। কিন্তু আপনার কি ভাবনা হয়না পৃথিবীর বুকে কতটা ভরের সৃষ্টি হয়েছে?
বাবু আমি আতকে উঠি আবারও যখন আমি হিসাব করি প্রকৃতির সাথে কতটা বেঈমানী করেছে এই উর্বর মানব জাতি?
বাবু প্রকৃতিতে প্রাণ নেই। আমাদের প্রকৃতি এখন এখন প্রাণহীন। আপনি ফটকি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধ করছেন, আপনি নদীর মাছের পর্যাপ্ত প্রজননের জন্য যুদ্ধ করছেন, গবেষণা করছেন, আন্দোলন করছেন। কিন্তু ভেবে দেখেছেন কিভাবে আপনি এর স্বার্থকতা পাবেন? আমাদের প্রকৃতি প্রাণহীন, আমাদের পৃথিবী সহ্য করতে পারছেনা ওজন।
বাবু আজ বিশ্ব বিবেকে মানুষের অস্তিত্বের সংকট নিয়ে নারা দিয়েছে। সত্যিই কি মানব সভ্যতা হুমকিতে?
বাবু আমার মতামত একশত ভাগ মানব সভ্যতা হুমকিতে। বাতাসে কার্বনের পরিমাণ দিন,দিন বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। উত্তপ্ত হয়ে চলছে পৃথিবী। বরফ গলে পানির স্তর বেড়েই চলেছে, অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি,ঝড়,জলোচ্ছ্বাস, মহামারি সারা প্রানীকূলের জন্য অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে থেকে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে।
বাবু আমি চিন্তিত। কেন জানেন? মানুষের উপেক্ষিত জীবন নিয়ে। আমার প্রজন্ম নিয়ে আমি চিন্তিত। মৃত্যু এবং কেমন মৃত্যু প্রকৃতি আমাদের উপহার দিচ্ছে ওটা নিয়ে চিন্তিত। এই মৃত্যুর শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত। যখন দেখি এই পৃথিবীতে বাবার লাশের পাহারাদার হয় আট বছরের শিশু। আমি চিন্তিত প্রকৃতি কি তার কঠিন রুপ নিয়ে মানব সভ্যতার শাস্তি দিতে প্রস্তুত?
বাবু আমার প্রজন্ম বড়ো আদরের, বড়ো আদর্শের।তাদের জন্য বাসযোগ্য আবাসস্থল কোথায় রেখে যাবো?কোথায় তৈরি করবো? কিভাবে তৈরি করবো? এমনিতেই তো পৃথিবীর ওজন বহুগুণ বৃদ্ধি।
কি করে গরবো আবাস আমার প্রজন্মের জন্য? তাহলে তো পৃথিবীর ওজন আরও বৃদ্ধি পাবে,প্রকৃতির সাথে আবার হবে বিরুদ্ধাচারন।প্রকৃতিও শাস্তি দেবে আবার, অবশিষ্ট পথ রুদ্র হয়ে যাবে আমার প্রজন্মের জন্য।
বাবু আপনার গবেষণা কি বলতে পারবে আমার আগামী প্রজন্মের কি হবে? টোটাল মানব সভ্যতা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
এখন করোনা মহামারীর বিশ্ব। এটাও কি প্রকৃতির বিরুদ্ধচারনের ফল নয় কি? প্রকৃতিকে আমরা ভারসাম্যহীন করে তুলে প্রকৃতির সাথে আমরা রহস্য করতেছি।তায় প্রকৃতি আমাদের ছেড়ে দিবে এটা কেন ভাবছেন বাবু?
আমার মন ভালো নেই বাবু তায় শরীরটাও গরমিল করছে। নিয়ন্ত্রণহীন মানুষের মৃত্যু দেখে আমি আমার প্রজন্মকে নিয়ে ভাবনার গহীনে নিমজ্জিত হয়ে গেছি। কি হবে আগামী প্রজন্মের, কি করে টিকে থাকবে এই উর্বর মানব জাতি।
বাবু গবেষণা করুন এমন গবেষণা যেখানে ফিরে আসবে আবার প্রকৃতির প্রাণ,ওজন কমবে পৃথিবীর। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ সহনশীল হবে, নদীর নাব্যতা ফিরে আসবে। আর আমাদের প্রজন্মের ঠিকানা আমরা রেখে যেতে পারবো।
তখনই ভালো থাকবে মন,ভালো থাকবে শরীর। নইলে মানব সভ্যতার শেষ পৃষ্ঠা লিখিত হলেও কেউ আর পড়তে পারবেনা।
প্রকৃতিকে বাচাও,পৃথিবীর ওজন কমাও।
You must be logged in to post a comment.