ফরিদপুর জেলা: বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের খরো স্রোতা পদ্মা নদী তীরবর্তী গড়ে উঠা একটি জনপদ। এই জনপদের নামকরণ করা হয় সুফি সাধক ফরিদুদ্দিনের নামানুসারে। ফরিদপুর জেলার উত্তরে রাজবাড়ী জেলা, পূবে পদ্মা নদী, মুন্সিগঞ্জ ও ঢাকা জেলা, দক্ষিণে মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলা, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ ও নরাইল জেলা অবস্থিত।
ফরিদপুর জেলারপূর্ব নাম ছিলো ফতেহাবাদ। ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৭৮৬ সালে মতান্তরে ১৮১৫ সালে। ১৭৮৬ সালে ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠিত হলেও এর পূর্ব নাম ছিলো জালালপুর। ১৮০৭ সালে ঢাকাকে জালালপুর হতে বিভক্ত করে ফরিদপুর নামকরণ করা হয়।
গোয়ালন্দ, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ এই চারটি মহকুমা সমন্বয়ে ফরিদপুর জেলার নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলাকে ভেঙ্গে রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরিয়তপুর ও গোপালগঞ্জ এই জেলার রুপান্তর করা হয়।
জানা যায় যে, ফরিদপুর জেলায় হাজী শরিয়তউল্লাহর নেতৃত্বে ফয়েজি আন্দোলন হয়। এই আন্দোলন সারা বাংলায় ব্যপক প্রসার লাভ করে। এই অঞ্চলে হাজী শরিয়তউল্লাহর পুত্র দুদু মিয়ার নেতৃত্বে নীলকর আন্দোলন হয়।
ফরিদপুর জেলায় ৫২টি কুঠির অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই জেলার প্রধান কুঠি ছিলো অালফাডাঙা উপজেলার মীরগঞ্জে যার ম্যানেজার ছিলো ডানলপ। গড়াই, মধুমতি, চন্দনা ও বারাসিয়া নদী তীরবর্তী এলাকায় নীল চাষ করা হতো।
ফরিদপুর জেলার উপজেলাগুলো হলো:
- ফরিদপুর সদর
- আলফাডাঙা
- বোয়ালমারি
- মধুখালী
- নগরকান্দা
- ভাঙ্গা
- সদরপুর
- সালথা ও
- চরভদ্রাসন ইত্যাদি।
- ফরিদপুর জেলার পৌরসভাগুলো হলো:
- ফরিদপুর সদর
- আলফাডাঙা
- বোয়ালমারি
- মধুখালী
- নগরকান্দা
- ভাঙ্গা ইত্যাদি।
ফরিদপুর জেলর আয়তন ২০৭৩ ব:গ:কি:। জনসংখ্যা ১৯,৮৮,৬৯৭ জন। স্বাক্ষরতার হার ৭৩%।
এই অঞ্চলে এক সময় ছোটো বরো অসংখ্য নদী নালা ছিলো যা আজ মৃত প্রায়।
এই জনপদের জনগণ অতি সহজ ও সরল। এখানকার অধিকাংশ জনগণ কৃষি কাজ করে জীবিকা নিবারণ করে থাকে। ধান, পাট, গম, যব, ভুট্টা, সরিষা ও মুষুর ডাল এই অঞ্চলের প্রধান ফসল। ফরিদপুর জেলার পাটের সুনাম বিশ্ব জুড়ে।
শীতকালে এখানকার খেজুররস ও খেজুরগুড়ের খ্যাতি দেশ জুড়ে। এই জনপদে শীতের সন্ধ্যায় প্রত্তেক বাড়িতে ভাপা, পুলি, পাটিসাপ্টা, সেমাই ও চিতাই পিঠাসহ নানা ধরনের পিঠা এবং পায়েস তৈরী করা হয়ে থাকে।
ফরিদপুর জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো যা এক সময় গ্রাম থেকে জেলা শহরে যেতে হলে গরুর গাড়ি অথবা নদী পথে নৌকায় চড়ে যেতে হতো অার এখন বাস যোগে সরাসরি জেলা শহরে যাওয়া যায়।
অগে খুলনা অথবা বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে হলে প্রচুর সময় লেগে যেতো আর কিছুদিন পর মাওয়া জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র ৩ ঘন্টায় ঢাকা যাওয়া যাবে। আর ফরিদপুরকে বলা হয় দক্ষিণের প্রবেশদ্বার।
ফরিদপুর জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে
সরকারী কলেজ ৮টি
বেসরকারী কলেজ ২৪টি
সরকারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬টি
বেসরকারী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮৯টি
জুনিয়র হাই স্কুল ৫২টি
মাদ্রাসা ১৪১টি
মেডিকেল কলেজ ২টি
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৯টি।
ফরিদপুর জেলায় অনেক মনীষী জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে
শামসু হক ফরিদপুরী
পল্লী কবি জসমউদ্দিন
বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুল রউফ
অম্বিকাচরণ মজুমদার
পরিমল গোস্বামী
কানাইলাল শীল
মধ্যযুগের কবি আওয়াল
স্বাধীনতা সংগ্রামী সুরেশচন্দ্র দে
স্বাধীনতা সংগ্রামী শরৎচন্দ্র রায় চৌধুরী
ঔপন্যাসিক ও কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
লেখক মৃাণাল সেন
চলচিত্রকার তারেক মাসুদ
অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবু
চলচ্চিত্র অভিনেতা অমল বোস
চিত্রনাইক চম্পা
চিত্রনাইকাচ সুচন্দ
আব্দুল হক ফরিদী
শিক্ষাবিদ আছাদুজ্জামান মিয়া
ফরদা আনোয়ার
সাবেক এল,জি, আর,ডি মুন্ত্রী খন্দকার মোসাররফ হোসেন
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী
গীতিকার ও সুরকার ফকির অালমগীর প্রমুখ ইত্যাদি।
ফরিদপুর জেলার দর্শনীয় স্থান ও প্রত্নতাত্ত্বিকগুলো হচ্ছে:
নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট
ধলার মোর
টেপাখোলা সুইচ গেট
হাসমদিয়া পার্ক, বোয়ালমারি
সরকারী রাজেন্দ্র কলেজ
পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের বাসভবন ও জাদুঘর
অাটরশি বিশ্ব জাকের মঞ্জিল
শেখ রাসেল শিশু পার্ক
বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুল রউফ স্মৃতি জাদুঘর ও পাঠাগার
পাতরাই মসজিদ ও দিঘী
সাতৈর মসজিদ
জগৎবন্ধুর আঙ্গিনা
শ্রীঅঙ্গন কানাইপুর জমিদার বাড়ি
বাইশরশি জমিদার বাড়ি
মীরগঞ্জ নীল কুঠি, আলফাডাঙা
কামারখালি গড়াই সেতু
মান্দারতলা রেল সেতু
ফরিদপুর চিনি কল, মধুখালী
শ্রী শ্রী রাধা গোবিন্দ মন্দির, তালমার মোর
তালমার মোর গরুর খামার
অম্বিকা ময়দান
ফুলিয়া মুন্সী বাড়ি, আলফাডাঙা
কাঠিয়া কালীবাড়ি, তালমার মোর (হিন্দু মন্দির)
ফরিদপুর জেলা জজ কোর্ট ভবন
ভাঙ্গা মুনসেফ জজ কোর্ট ভবন
বর্তমান ভাঙ্গা গোলচত্তর
মথুরাপুর দেউল, মধুখালী ইত্যাদি।
ক্লিক করে আরও পড়ুন..
ফরিদপুরবাসিদের অান্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিন্দ।
You must be logged in to post a comment.