উদ্ভিদ ও পানির সম্পর্ক?

আমরা জানি, জীবদেহের প্রোটোপ্লাজম ভৌত ভিত্তি এবং এই প্রোটোপ্লাজমে শতকরা পানির পরিমাণ ৯০ ভাগ। এই কারনে পানিকে (ফ্লুইড অফ লাইফ) বলা হয়ে থাকে।

পানির পরিমাণ কমে গেলে প্রোটোপ্লাজম সংকুচিত হয়ে মারা যেতে পারে। উদ্ভিদের দেহে যত বিপাকীয় বিক্রিয়া চলে, পানির অভাব হলে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে। 

উদ্ভিদদেহে পানির প্রয়োজনীয় দিকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ

(a) প্রোটোপ্লাজম সজীব রাখতে পানির বিকল্প নেই। একটি সংকুচিত প্রোটোপ্লাজমযুক্ত কোষকে বাঁচাতে চাইলে দেরি না করে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে। 

(b) প্রস্বেদন ও সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া  চালু রাখতে পরিমাণমতো পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দরকার। এজন্যই শুষ্ক মৌসুমে বড় বড় উদ্ভিদেও পানি সেচ দিতে হবে।

(c) পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্রাবক। বিপাকিয় অনেক বিক্রিয়ায় পানির গুরুত্ব অপরিসীম। 

(d) উদ্ভিদের কোষ বৃদ্ধি ও চলনে পানির ভূমিকা রয়েছে।

এখন আমাদের মনে প্রশ্ন আসবে যে 

উদ্ভিদ জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় পানি কোথায় এবং কিভাবে পায়?

উদ্ভিদ প্রধানত মূলের মাধ্যমে মাটি থেকে পানি শোষণ করে। উদ্ভিদের ৩টি প্রক্রিয়া সম্মিলিতভাবে শোষন কাজ সম্পাদনা করে। প্রক্রিয়া ৩টি হলো ইমবাইবিশন, ব্যপন এবং অভিশ্রবন

ইমবাইবিশনঃ ইমবাইবিশন বলতে কলয়েড জাতীয় শুষ্ক বা আংশিক শুষ্ক পদার্থ কর্তৃক তরল পদার্থ শোষণের বিশেষ প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

এক খন্ড শুকনা কাঠের এক প্রান্ত পানিতে ডুবালে ঐ কাঠের খন্ডটি কিছু পানি টেনে নেবে৷ আমরা জানি, কলয়েড জাতীয় শুকনা বা আধা শুকনা পদার্থ তরল পদার্থ শুষে নেয়।

এ জন্য কাঠের খন্ডটি পানি শুষে নিয়েছে৷ এটাই হলো ইমবাইবিশন প্রক্রিয়া। সেলুলোজ, স্টার্চ, জিলাটিন ইত্যাদি হাইড্রোফিলিক বা পানিপ্রিয় পদার্থ৷ এরা তরল পদার্থের সংস্পর্শে এলে তা শুষে নেয় আবার তরল পদার্থের অভাবে সংকুচিত হয়।

কোষপ্রাচীর ও প্রোটোপ্লাজম কলয়েডধর্মী হওয়ায় ইমবাইবিশন প্রক্রিয়ায় পানি শোষণ করে স্ফীত হয়ে ওঠে৷ এটি পানি শোষণের একটি অন্যতম প্রক্রিয়া।

ব্যপনঃ যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো দ্রব্যের অনু বেশি ঘনত্বের এলাকা থেকে কম ঘনত্বের এলাকায় ছড়িয়ে পরে তাকে ব্যপন প্রক্রিয়া বলে।

উদাহরন সরুপঃ ঘরের এক কোনে কিছু সুগন্ধি ঢেলে দিলে তা সম্পূর্ণ ঘরে ছড়িয়ে পরে। (১)একই তাপমাত্রা ও বায়ুমন্ডলীয় চাপে কোনো পদার্থের বেশি ঘনত্ববিশিষ্ট দ্রবণের দিকে দ্রাবকের ব্যাপিত হওয়ার প্রচ্ছন্ন ক্ষমতাকে ব্যপন চাপ বলে।

(২) একই বায়ু চাপে কোনো একটি দ্রবণের ও দ্রাবকের ব্যপন চাপের পার্থক্যকে ব্যপন চাপ ঘাটতি (Diffusion pressure deficit) বলে।

পাতার মেসোফিল টিস্যুতে এই ব্যপন চাপ ঘাটতির ফলে পানির ঘাটতি আছে, এমন কোষ পাশের কোষ থেকে পানি টেনে নেয়। একথায় বলা যায় যে উদ্ভিদের পানি শোষণে ব্যপনের গুরুত্ব অপরিসীম।

অভিস্রবণঃঅভিস্রবণ বলতে দুটি ভিন্ন ঘনত্বের দ্রবণ একটি অর্ধভেদ্য পর্দা দিয়ে পাশাপাশি আলাদা করে রাখলে পর্দা ভেদ করে কম ঘন দ্রবণ থেকে অধিক ঘন দ্রবণের দিকে দ্রাবক অণু প্রবেশ করার প্রক্রিয়াকে বোঝায়।

দুটো দ্রবণের ঘনত্ব সমান না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে।অভিস্রবন এক প্রকার ব্যাপন।

অভিস্রবণ কেবলমাত্র তরলের ক্ষেত্রে ঘটে। একে অন্যভাবে বলা যায় কোনো শক্তির প্রয়োগ ছাড়াই তরলের বাস্তবিক চলাচল।অভিস্রবণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়,

অন্তঃঅভিস্রবণ, বহিঃঅভিস্রবণ। কোষের বাইরে অবস্থিত তরল পদার্থ যখন অর্ধভেদ্য পর্দা ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করে তখন সেই প্রক্রিয়াকে অন্তঃঅভিস্রবণ বলে।

কোষের ভেতর থেকে যখন তরল পদার্থ পর্দা ভেদ করে বাইরে বেরিয়ে যায় তখন সেই প্রক্রিয়াকে বহিঃঅভিস্রবণ প্রক্রিয়া বলে।

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles