হঠাৎ হাই প্রেশার বেড়ে গেলে যা খাবেন

হাই প্রেশার কিংবা লো প্রেশার দুটোই স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। অনেকেই মনে করেন স্থূল স্বাস্থ্য যাদের, তারাই উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন। তবে এটা সত্য নয়। দুর্বল স্বাস্থ্যের মানুষেরও উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার থাকতে পারে। 

হাই প্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণসমূহ

সাধারণত হাই প্রেশার এর নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ থাকে না। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আছে কি না সেটা বোঝার উপায় হলো নিয়মিত রক্তচাপ মাপা। রক্তচাপ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রেশার মাপার যন্ত্র দ্বারা দুইটি সংখ্যা রেকর্ড করা হয়—

সিস্টোলিক প্রেসার বা চাপ: দুটি রিডিং এর মধ্যে বড় সংখ্যা বা ওপরের মানটি হলো সিস্টোলিক চাপ। হৃৎপিণ্ড থেকে প্রতি স্পন্দনে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালনের সময়ে এই চাপ সৃষ্টি হয়।

ডায়াস্টোলিক প্রেসার বা চাপ: রিডিং দুটির মধ্যে ছোট সংখ্যা বা নিচের মানটি হলো ডায়াস্টোলিক চাপ। রক্ত সঞ্চালনের বিরুদ্ধে রক্তনালীর বাধা থেকে এই চাপের সৃষ্টি।

রক্তচাপকে মিলিমিটার (পারদ) এককে মাপা হয়। ধরে নেয়া যাক আপনার রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার (পারদ)। তাহলে সিস্টোলিক চাপ হবে ১২০ এবং ডায়াস্টোলিক চাপ হবে ৮০।

মানুষের রক্তচাপ একে অন্যের থেকে কিছুটা ভিন্ন হয়ে থাকে। একজনের জন্য যেই রক্তচাপ বেশি বা কম, তা অন্যজনের জন্য স্বাভাবিক হতে পারে। রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ থেকে ১২০/৮০—এই সীমার মধ্যে থাকে তখন তা স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেশার বলা হয় যদি—

  • রক্তচাপ সবসময় ১৪০/৯০ বা এর বেশি থাকে
  • ৮০ বছর কিংবা তার অধিক বয়সীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ যদি ১৫০/৯০ বা এর বেশি থাকে

সময়মত রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা না করা হলে, উচ্চ রক্তচাপ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মত মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

হাই প্রেশার থাকা সত্ত্বেও, একজন ব্যক্তি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিয়ে ঝুঁকিমুক্ত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া সুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন আনার মাধ্যমে সহজেই হাই প্রেশারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনা যায়।

হাই প্রেশার বেড়ে গেলে অনেকে তেঁতুলের শরবত খেয়ে থাকেন। কেউ কেউ মাথায় পানি বা বরফ দিয়ে থাকেন । এতে সাময়িক উপশম হলেও হাই প্রেশার কমানোর জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে।

হাই প্রেশার রোগীর জন্য আদর্শ খাবার

বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূল, শাক-সবজি ও লো ফ্যাটের দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে। গোটা শস্যের তৈরি খাদ্য, বাদাম, মাছ ও মুরগি খাওয়া যাবে। সোডিয়াম, চিনি, চিনিযুক্ত পানীয়, বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস ও রেডমিট গ্রহণ সীমিত রাখতে হবে। সম্পৃক্ত চর্বি, উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার ও ট্রান্সফ্যাট পরিহার করতে হবে।

হাই প্রেশারে খাদ্য তালিকা যেমন হতে পারে

  • সকালের খাবারে রাখতে পারেন লাল আটার তৈরি দুইটি বা তিনটি রুটি, মিশ্র সবজি এক কাপ, ডিম সেদ্ধ একটি, রং চা এক কাপ। 
  • দিনের মধ্যভাগের স্ন্যাক্স হিসেবে কম মিষ্টি জাতীয় ফল এক বা দুইটি। 
  • দুপুরের খাবারে রাখতে পারেন ভাত দুই কাপ, শাক অথবা সবজি এক কাপ, এক টুকরা বড় মাছ (সপ্তাহে এক দিন সামুদ্রিক মাছ), ডাল এক কাপ, সালাদ আধা কাপ। 
  • সন্ধ্যার নাশতায় ভিজিয়ে রাখা কাঠ বাদাম খেতে পারেন পাঁচ পিস। 
  • রাতের খাবারে ভাতের পরিমাণ হবে এক কাপ অথবা দুই পিস রুটি, সবজি এক কাপ, মুরগির বুকের মাংস এক পিস, ডাল এক কাপ। 
  • ঘুমাতে যাওয়ার আগে টক দই এক কাপ এবং কালোজিরা আধা চা চামচ।

পরিশেষ 

আশা করি এই লেখাটি পড়ার পর, আপনারা যারা হাই প্রেশার সমস্যায় ভুগছেন তারা উপকৃত হবেন। আজ এ পর্যন্তুই। আল্লাহ হাফেজ। 

Enjoyed this article? Stay informed by joining our newsletter!

Comments

You must be logged in to post a comment.

Related Articles
Recent Articles